গবেষণা কার্যক্রমে অষ্টগ্রামের হাওরে সরিষার বাম্পার ফলন

135

মো. নজরুল ইসলাম, অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে শুরু হয়েছে সরিষার উপরে গবেষণা কার্যক্রম। হাওর এলাকায় এক ফসলী বোরো ধানের জমিকে দুই ফসলের আওতায় আনার জন্য স্বল্প জীবন কালের সরিষা ও স্বল্প জীবন কালের বোরো ধানের কম্বিনেশনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ পরিমাণ জমিতে কিভাবে দুই ফসল করা সম্ভব তার উপর শুরু হয়েছে ব্যাপক গবেষণা।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্ট ফান্ড, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয় পরিচালিত বাংলাদেশ হাওর অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন উপযোগী ফসল ব্যবস্থাপনার নকশা প্রণয়ন ও উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) এর অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ময়মনসিংহের কৃষিতত্ত্ব বিভাগ অষ্টগ্রাম উপজেলার বড় হাওরে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবছর অষ্টগ্রামে ১৭০ একর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে, যার পরিমাণ গত বছরের চাইতে ২০একর বেশি। সরেজমিনে গবেষণা প্লটে গিয়ে দেখা যায় উক্ত প্লটে পাঁচ জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে, গবেষণা প্লটের গাছগুলি কৃষকের গাছ থেকে প্রায় দ্বিগুন লম্বা। ফলের (পড) সংখ্যাও প্রায় দেড়গুন বেশী এবং পরিপক্ষ অবস্থায় গাছগুলি খারা আছে এবং কৃষকের গাছগুলি জমিতে শুয়ে আছে। কারণ হিসেবে সূত্র জানায় কৃষকরা যথাসময়ে সার ও সেচ ব্যবস্থাপণায় গুরুত্ব না দেয়ার কারণেই কৃষকের সরিষার ফলন তুলনামূলক ভাবে অনেক কম হয়। দেখাযায়, উক্ত গবেষণা প্লট দেখে উদ্বুদ্ব হয়ে স্থানীয় কৃষকরা আরও ৫ একর জমিতে তাৎক্ষণিক ভাবে সরিষা চাষ শুরু করেন। এসব জমিতেও হয়েছে বাম্পার ফলন।
স্থানীয় সরিষা চাষীদের সাথে এবিষয়ে কথা হলে তারা জানান, এত স্বল্প খরচে সরিষার এত অধিক উৎপাদন সম্ভব তা আমাদের জানা ছিলনা। কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের এ গবেষণা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে ও আমরা যদি এ গবেষণা পদ্ধতিকে ঠিক মত অনুসরণ করি তবে আমাদের এ বড় হাওরে সরিষা উৎপাদনে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
এ বিষয়ে গবেষক কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে জানান, শুধুমাত্র সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে সরিষার উৎপাদন দ্বিগুন করা সম্ভব।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ময়মনসিংহের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও এ গবেষণা কার্যক্রমের তত্ত্বাবধায়ক ড. রমিজ উদ্দিন মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে যেন দেশের এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা না হয়। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে ও দেশের ভোজ্য তেলের সংকটের কথা চিন্তা করে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। যেহেতু অতি অল্প খরচে স্বল্প মেয়াদী এ সরিষা ঘরে তোলা সম্ভব তাই এ গবেষণায় আমরা সফল হলে কৃষক যেমন লাভবান হবে তেমনি শুধুমাত্র সরিষা থেকেই দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা ৪০% মেঠানো সম্ভব হবে বলে আশা করছি।