ঠাকুরগাঁওয়ে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় দুর্ভোগে নিম্ন আয়ের মানুষ

82

মোঃ মজিবর রহমান শেখ,, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,,ঠাকুরগাঁওয়ে জেঁকে বসেছে শীত। বিকাল থেকেই শুরু হয় হিমেল হাওয়া ও কুয়াশা পড়া। ভোর থেকে বেলা ১০-১১ টায়েও দেখা মিলে না সূর্যের। রাত বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টির মতো ঝিরঝির করে পড়তে থাকে কুয়াশার ফোঁট ফোঁটা বিন্দু। আর এমন কনকনে ঠান্ডায় চরম বিপাকে ও দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। উত্তরের ঠাকুরগাঁও জেলা হিমালয়ের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় প্রতিবছর এখানে শীতের প্রকোপ বেশি হয়ে থাকে। এবারেও তার কোন ব্যতিক্রম হয়নি। নভেম্বর থেকে এ জেলায় শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকলেও গত কয়েক সপ্তাহ থেকে জেলায় শুরু হয়েছে প্রচন্ড কুয়াশা ও হিমেল হাওয়া। দুপুরে সূর্যের দেখা মিললেও রোদের তাপমাত্রা থাকে কম। দেখা যায়, বিকেলে শুরু হয় হিমেল হাওয়া ও কুয়াশায় ঢাকা পরে চারপাশ। দিনে ও রাতে স্থানীয়সহ দূরপাল্লার যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। হেডলাইটের আলোও কুয়াশায় ভেদ করতে পাচ্ছে না। এতে দুর্ঘটনার শঙ্কা করছেন গাড়ি চালকরা। তেঁতুলিয়া থেকে পাথর বোঝাই ট্রাক নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন সাহাদত হোসেন। রাত ৯ টার দিকে ঠাকুরগাঁও ট্রাকটার্মিনালে কথা হয় তার সাথে তিনি বলেন, ‘তেঁতুলিয়া থেকে লোড ট্রাকটি নিয়ে ঠাকুরগাঁও আসলাম খুব কষ্ট করে। রাস্তায় এতো কুয়াশা হেডলাইটের আলোই দুই হাত দূরে ভালো করে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এতে রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা খুব।’ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড গোল চোত্বরে অটোচালক মানিকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় ২০ বছর ধরে অটো চালাচ্ছি ঠাকুরগাঁও জেলায়। এবারের মতো এমন ঘন কুয়াশা আর অন্যান্যবার দেখিনি। কুয়াশার কারণে অটো চালাতে সকালে ও রাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে এবং অনেক দুঘর্টনাও ঘটছে; কিন্তু তারপরেও ঝুঁকি নিয়ে আমাদের অটোচালাতে হচ্ছে।’ঠাকুরগাঁও রেনু মার্কেটে রাতে নৈশপ্রহরীর কাজ করছিলেন হিরা। তিনি বলেন, ‘শীতে থাকা যাচ্ছে না। কাথা কম্বল কিছু নাই। তাই কাঠ-খড় পুড়িয়ে আগুন পুহাচ্ছি। এভাবেই কষ্ট করে ডিউটি করছি।’এই ঠান্ডায় প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেড় হচ্ছেন না মানুষ। শীতের কারণে মাঠ ঘাটে ঠিকভাবে কাজ কর্মও করতে পারছেন না অনেকে। এমন অবস্থায় শ্রমজীবী, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে।কিছু কিছু মানুষ উপায়ন্তর না পেয়ে দরিদ্রতার কষাঘাতে বৃদ্ধ বয়সেও এই শীতে মাঠে ঘাটে কাজ করছেন পেটের দায়ে। সরকারের কাছে তাদের আকুতি শীতবস্ত্রের। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুরের ফেঁসাডাঙ্গী এলাকায় আলুর ক্ষেতে কাজ করছিলেন কয়েজন শ্রমিক। তমিজ উদ্দিন নামে এক বৃদ্ধ বলেন,‘বাবা দুঃখের কথা আর কাকে ও কি বলবো! দুই থেকে গায়ে প্রচন্ড জ্বর তারপরেও এই অবস্থায় ঠান্ডায় মাঠে আসতে হয়েছে শুধু পেটের জন্য। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না।’এই বয়সে ও এতো শীতে মাঠে কাজ করছেন কেন ছেলে মেয়ে নাই আপনার? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলে তারা বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। বুড়া বুড়ি আমাদের দেখে না তারা। তাই বুড়া বুড়ি আমরা দুইজনই কাজ করে খাই।’মোহম্মদপুরের খুরসেদ নামে এক শ্রমিকও কাজ করছিলেন মাঠে। তার গায়ে পাতলা একটি শার্ট সেটিও আবার পিছনে অর্ধেকটা ছেঁড়া। তিনি বলেন, ‘সরকার বা চেয়াম্যানের কাছ থেকে আমি একটাও শীতের কাপড় পেলাম না এ পর্যন্ত। তাই সরকার যদি একটু দয়া করে শীতে কাপড় দিতো তাহলে এই প্রচন্ড ঠান্ডা থেকে রেহায় পেতাম।’নারগুন কহড়পাড়া গ্রামের মাঠে আলু ক্ষেতে সেচ দিচ্ছিলেন সিরাজুল ইসলাম (৭০)। তিনি বলেন, এবার শীতটা একটু খুবই বেশি মনে হচ্ছে। দুপুর হয়ে গেছে তাও সূর্যের তাপ তেমন নেই। এতে আমাদের কিছু করার নাই। আমরা গরিব মানুষ কাজ করে খেতে হয়। তাই যতই কষ্ট হোক আমাদের মাঠে কাজ করতেই হবে। তবে সরকার যদি আমাদের দিকে একটু সুনজর দিয়ে গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে আমাদের উপকার হতো।’ ঠাকুরগাঁওজেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এবার ঠাকুরগাঁও জেলার জন্য ২৮ হাজার কম্বল বরাদ্দ এসেছে। তা ছিন্নমূল ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এ বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল তাই আরও ২০ হাজার কম্বল ও ২০ লক্ষ টাকা শীতবস্ত্রের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও এর পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা এবং ধনাঢ্যদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।