নতুন আঙ্গিকে মধ্যেপ্রাচ্য শান্তি অগ্রগতির সম্ভাবনা ক্ষীণ

103
রায়হান আহমেদ তপাদার: 

সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মঞ্চে মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে আবারও নতুন সমীকরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধি দেশগুলো বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গনে নিঃসন্দেহে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। যেখানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তারে মুখিয়ে থাকে পশ্চিমা বিশ্ব। মূলত, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির হিসাব-নিকাশ, যুদ্ধবিগ্রহ, সন্ত্রাসবাদের নব্য উত্থান ও গণতন্ত্রের সংকট নতুন সমস্যা নয়। ২০২২ সাল শেষেও বিশ্বের যে ক’টি অঞ্চলে অস্থির পরিস্থিতি বজায় থাকার ইঙ্গিত রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো মধ্যপ্রাচ্য। এই অঞ্চলে বিশ শতকের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশজুড়ে যে ভারসাম্য ছিল তা ভেঙে পড়ে নতুন শতাব্দীর প্রথম দশকে। দ্বিতীয় দশকে সম্পর্কের নতুন সমীকরণ তৈরি হতে থাকে। তৃতীয় দশকের প্রথম দুই বছর ছিল নতুন এক মধ্যপ্রাচ্যের ভিত্তি তৈরির সময়। ২০২৩ সাল এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নতুন এক সময়কালের সূচনার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বছর হতে পারে। নতুন বছরের শুরুতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কট্টরপন্থী নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি পশ্চিম তীর ও জেরুসালেমকে ইহুদিকরণের যে প্রক্রিয়া আগের শাসনের সময় শুরু করেছিলেন সেটিকে আরো এগিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জর্দানের বাদশাহ ব্যতিক্রমীভাবে ইসরাইলের এই নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন যাতে ওআইসি তার পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের নতুন ভারসাম্যে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত তুরস্কে চ্যালেঞ্জমুখর নির্বাচন এই বছরের মাঝামাঝি। সৌদি আরবে মুহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতা গ্রহণের জন্য ২০২৩ হতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ বছর। লিবিয়া ঐক্যবদ্ধ দেশ থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এই সালটি হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সময়। সিরিয়ায় শান্তি ও স্থিতি আর শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে ২০২৩ সালে গুরুত্বপূর্ণ কিছু হতে পারে। ইরানের সাথে উপসাগরীয় দেশগুলো এবং তুরস্কের সম্পর্কে যে উত্তেজনা ও টানাপড়েন রয়েছে তার মধ্যে একটি নতুন মেরুকরণও হতে পারে এই সময়ে। 

এর বাইরে মিসর ইয়েমেন লেবানন তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন এক পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে এ সময়। ২০২২ জুড়ে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোর প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং অন্যান্য পশ্চিমা নেতারা যখন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও যুবরাজ মন্ত্রী মুহাম্মদ বিন সালমানের সাথে সাক্ষাত করেছেন, তখন অনেক ইউরোপীয় দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে সৃষ্ট জ্বালানি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তার জন্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) সদস্যদের দিকে ফিরেছে। উভয় প্রবণতা হাইলাইট করে যে, কীভাবে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অনেক উপসাগরীয় আরব দেশকে বিশ্বব্যাপী অভিনেতাদের তাদের গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দিতে সক্ষম করেছিল। গত ১২ মাসে, জিসিসি দেশগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে স্পষ্ট করে তুলতে চাইছে যে, তারা স্বাধীন খেলোয়াড়। এই দেশগুলো তাদের নিজস্ব স্বার্থ অনুসরণ করে; কারণ তারা ক্রমবর্ধমান শক্তির প্রতিযোগিতার মধ্যে ক্রমেই বাইরের বিশ্বে নেভিগেট করতে ব্যস্ত। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের রিয়াদ সফর এবং ইউক্রেন যুদ্ধে তুলনামূলকভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখার পটভূমিতে সৌদি আরব ও রাশিয়া জ্বালানি নীতিতে যেভাবে পরস্পরকে সহযোগিতা করেছে তা ওয়াশিংটনের কাছ থেকে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার জন্য রিয়াদের সংকল্পকে তুলে ধরে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সৌদি নেতৃত্বের হতাশা বাড়ছে, এটি তারও প্রমাণ দেয়। 
স্বাভাবিকভাবেই, ২০২৩ সালে উপসাগরীয় উন্নয়ন গুলো কিভাবে কার্যকর হবে সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। তবুও, ২০২২ সাল শেষে বিবেচনা করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা এবং সম্ভাব্য পরিস্থিতি রয়ে গেছে। ২০২৩ সালে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দিকে আরব অঞ্চলের সামগ্রিক প্রবণতা পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ হবে। আব্রাহাম চুক্তি তে আরো আরব-মুসলিম দেশগুলোর প্রবেশে বাইডেন প্রশাসন তার কার্ড খেলতে চায় কি না সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। 

নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী হবার পর এটিকে সামনে এগিয়ে নিতে চাইতে পারেন। তবে এখনো সৌদি আরবের মতো দেশ এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে, এমন ইঙ্গিত দেয়নি। ওমান সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছে। তবুও ২০২৩ সালে উন্নয়নগুলো কিভাবে উন্মোচিত হয় তার ওপর নির্ভর করে আব্রাহাম চুক্তিতে থাকা বিষয়গুলোর প্রভাবিত করতে পারে সে বিষয়ে সচেতন জিসিসি রাজ্যগুলোর জন্য বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি অতসুদানের মতো অন্যান্য আরব বা আফ্রিকান দেশগুলো যদি গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় যেগুলোর মোকাবেলায় জিসিসি রাজ্যগুলোর সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। ২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী খাদ্য মূল্যের বৃদ্ধি সিরিয়া, লিবিয়া এবং তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার একটি কারণ ছিল। একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ২০২৩ সালের শেষের দিকে দেখা দিতে পারে। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ যারা কাতারকে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২১ সালের প্রথম পর্যন্ত অবরোধ করেছিল, তারা ২০২২ জুড়ে দোহার সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নত করেছে। জিসিসি পরিবারের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কের এই সামগ্রিক উষ্ণতা ২০২৩ সালেও অব্যাহত থাকতে পারে। রাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্র এবং মানুষ থেকে মানুষ স্তরে এই সম্পর্ক বাড়তে পারে। কাতারে শেষ হওয়া বিশ্বকাপটি একটি উদ্দীপক হিসেবে কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বকাপ চলাকালে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান-এমবিএস এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ-এমবিজেড যেভাবে দোহায় কাতারের আমিরের সাথে দেখা করেছিলেন তা তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২১ সালের শুরুর দিকে কাতারের অবরোধের সময় দোহায় এই তিন নেতার মধ্যে এ ধরনের আনন্দদায়ক বৈঠক অকল্পনীয় ছিল। নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে, ইয়েমেনে কোনো যুদ্ধও নেই, শান্তিও নেই এর বিবর্তন জিসিসি সদস্যদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। ২০২৩ ইয়েমেনিদের জন্য একটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং বছর ছাড়া অন্য কিছু হবে বলে আশা করার কারণ নেই। 

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বিশ্বাস করেন যে, শান্তির দিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিছু বিশ্লেষক উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, ইয়েমেনে স্থায়ী শান্তি আনার একমাত্র বাস্তবসম্মত উপায় উত্তর-দক্ষিণ লাইনে দেশকে বিভক্ত করা এবং ১৯৯০ সালের পুনঃএকত্রীকরণের আশা ছেড়ে দেয়া যদিও বিভাজন অগণিত চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে এবং এর সমস্যাযুক্ত নানা দিক রয়েছে। নতুন বছরেও ইয়েমেনে হুথিরা সম্ভবত প্রভাবশালী থাকবে। এ সময় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার তার ঐক্য বাড়াতে ব্যর্থ হবে এবং তাই একটি শক্তিশালী হুথি বিরোধী ফ্রন্ট গড়ে তুলতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে, সৌদি আরব ক্রমবর্ধমানভাবে তার ব্যয়বহুল হস্তক্ষেপের চাপ অনুভব করবে যা ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তার নবম বছরে প্রবেশ করবে। এই সময়ে সৌদি আরব এবং আমিরাত কিভাবে ইয়েমেনে তাদের বিরোধপূর্ণ স্বার্থের মোকাবেলা করে তা দেখা গুরুত্বপূর্ণ হবে। বিশেষ করে যদি ২০২৩ সালে রিয়াদ এবং আবুধাবির পৃষ্ঠপোষকতা প্রাপ্ত দলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আরো লড়াইয়ে লিপ্ত হয় তখন পরিস্থিতি জটিল হবে। এখন পর্যন্ত, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত বেশির ভাগ ইয়েমেনে তাদের মতবিরোধ নিষ্পত্তি করতে সফল হয়েছে। তবুও, এটি সম্ভবত আগামী বছর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরোধের একটি উৎস থেকে যাবে।২০২০ সালে লিবিয়ার যুদ্ধবিরতির পর নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, দেশটির দুই প্রতিদ্বদ্বী প্রশাসনের মধ্যে বিভাজন এখনো শক্তিশালী হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে চলমান জাতীয় বিভাজন এবং পরবর্তী মতবিরোধের কারণে আসন্ন নির্বাচন এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। দেশটিতে শুধু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই স্থবির হয়ে পড়েনি, বরং ক্রমেই সঙ্ঘাতের প্রত্যাবর্তন ঘটছে, ত্রিপোলিতে প্রতিদ্বদ্বী মিলিশিয়াদের সংঘর্ষে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল থেকে বাহিনী রাজধানীতে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় পার্লামেন্টে সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপ ফাতি বাশাঘাকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দেবীবেহ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানানো নতুন সঙ্কটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

এই সঙ্ঘাত এমন এক ভঙ্গুরতার ইঙ্গিত দেয় যাতে সহজে দেশটি আবার গৃহযুদ্ধে ফিরে যেতে পারে। জাতিসঙ্ঘ যখন সব রাজনৈতিক পক্ষের চুক্তিতে নির্বাচন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে তখন পূর্ব লিবিয়ার কার্যত শাসক খলিফা হাফতার সতর্ক করে দেন যে, এই প্রক্রিয়াটির প্রচেষ্টার জন্য এটিই হবে চূড়ান্ত সুযোগ। পশ্চিম লিবিয়ায় নতুন করে আক্রমণ শুরুর কথা খোলাখুলিভাবে উল্লেখ না করলেও হাফতারের সতর্কতাকে অনেকে তার নেতৃত্বে দেশকে একত্রিত করার চেষ্টা করার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহারের একটি গোপন হুমকি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। যদি তা না হয়, তবে এর একটি সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে, দেশটি দু’টি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের মধ্যে বিচ্ছেদে পড়বে। লিবিয়ার স্বাধীনতা দিবসে যে বক্তৃতায় তিনি এই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন তার আগে, রাজনৈতিক ও সাংবাদিক বলয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে হাফতার আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ব লিবিয়ার বিচ্ছিন্নতা এবং একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেবেন। এই গুজব অবশ্যই মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে, তবে এর বেশ বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে যে, বিদ্যমান বিচ্ছিন্নতাবাদী আওয়াজ ২০২৩ সালে আবারো নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে এবং বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরো খারাপ হলে সমর্থন লাভ করতে পারে। ২০২৩ সাল হবে আধুনিক তুর্কিয়ে প্রজাতন্ত্রের ১০০তম জন্মদিন। এক শতাব্দী আগে অটোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষের ওপর দেশটি সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এখন পরিস্থিতি অনেক বেশি উত্তেজনাপূর্ণ। কঠোরভাবে ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমমুখী প্রজাতন্ত্র থেকে বিবর্তিত হয়ে একটি পুনরুজ্জীবিত আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়ে কঠোর সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত সংস্কারের একটি সিরিজ শুরু হয় তুরস্কে। দেশটির আধিপত্যবাদী প্রভাব বিস্তার এবং আরো আত্মবিশ্বাসী স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি নিয়েছে এরদোগানের বর্তমান সরকার।গত কয়েক বছর ধরে তুরস্কে অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং সিরিয়ার সঙ্ঘাত থেকে লক্ষাধিক শরণার্থীর চলমান উপস্থিতি সামাজিক অস্থিরতা এবং অতি জাতীয়তাবাদী মনোভাবকে জাগিয়ে তুলছে। 

গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম দিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত নিয়ে গঠিত উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ জিসিসি-এর সাথে বৈঠক করেছেন। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা ছাড়াও তারা ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং একটি গভীর নিরাপত্তা সম্পর্ক গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেন। সউদী আরবে অনুষ্ঠিত এ শীর্ষ সম্মেলন চীন ও উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে এবং এ অঞ্চলে পশ্চিমা প্রভাব হ্রাস পাওয়াকে প্রতিফলিত করেছে। চীনের সাথে বাণিজ্যের ওপর উপসাগরের ক্রবর্ধমান নির্ভরতার সাথে সাথে পশ্চিমের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব অনুসরণ করার আকাক্সক্ষাটি হ্রাস পেয়েছে। একটি গোষ্ঠী হিসাবে এটি ইরাকে পশ্চিমের সামরিক আগ্রাসন এবং ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে বৃহত্তর লড়াইকে সমর্থন করেছিল।কিন্তু অতি সম্প্রতি, উপসাগর উল্লেখযোগ্য ভাবে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমকে সমর্থন করতে অস্বীকার করেছে। এটি সমকামিতা প্রচারের জন্য নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে, আর কাতার ফিফা পুরুষদের বিশ্বকাপে যৌনতার বৈচিত্র্য সমর্থনকারী রংধনু পতাকা সক্রিয়ভাবে নিষিদ্ধ করেছে। তাই চীন-উপসাগর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব আরো শক্তিশালী হওয়ার চিত্র তুলে ধরার জন্য চীনা প্রেসিডেন্টের সউদী আরব সফরটি উপযুক্ত সময়ে ঘটেছে। এবং নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে যে, উপসাগরীয়-চীনা বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্ক আরো গভীর হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অভিমত,  
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মধ্যপ্রাচ্যের নীতির খুব বেশি পরিবর্তন করবেন-এমনটা ভাবা যায় না। তবে আশার আলো হচ্ছে-তিনি নির্বাচনের পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইরানের পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি জোটকে অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। তবে ইসরাইল ও সৌদি আরবকে আগের মতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অকুণ্ঠিত সমর্থন প্রদান করা থেকে বিরত থাকবেন জো বাইডেন প্রশাসন এমনটা অনুমেয়। কিন্তু এতে কৌশলগত সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন আসবে না।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট