নিম্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস

137
রায়হান আহমেদ তপাদার:

বৈশ্বিক মন্দার কবলে খেটে খাওয়া, শ্রমজীবী, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের দারিদ্র্য বেড়েছে। অনেকে চাকরি হারিয়ে পরিবার নিয়ে নাজেহাল অবস্থায় রয়েছেন। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বহুগুণ কমে গেছে। যাদের আয় কমে গেছে, তারা কী পরিমাণ আর্থিক দুর্দশায় পড়েছে তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যত দিন যাচ্ছে বৈশ্বিক মন্দার সঙ্কট ততোই বাড়ছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশের বিরাটসংখ্যক মানুষ কতটা বিপাকে পড়তে পারে, তা কি আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ভেবে দেখেছে? সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, এক মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ছোলা, মসুর, ভোজ্যতেল, আটা, আদা, রসুন, চিনি, গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি, খেজুরসহ অন্তত ১৬ ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অসাধু সিন্ডিকেট গত দুই মাসে ধাপে ধাপে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বাস্তব চিত্র এর বিপরীত। দেশে বাজার ব্যবস্থার একটি চিরাচরিত প্রথা হলো পবিত্র রমজান বা যেকোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে কিছু অদৃশ্য হাতের কারসাজিতে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। দেখা যাচ্ছে, রমজান শুরুর মাসখানেক আগে থেকেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যাতে রমজানে ভোক্তারা হঠাৎ পণ্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে অভিযোগ করার কোনো সুযোগ না পান। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অনেক সময় বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির দোহাই দেয়া হয়। তবে বাস্তবতা হলো, দেশে বছরজুড়ে পণ্যমূল্যে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের বিপরীত চিত্রই পরিলক্ষিত হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লে স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনে যে বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয় তা বলে প্রকাশ করার মতো নয়। 

উদ্বেগের বিষয় হলো, রমজানের আগে ধাপে ধাপে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর মূল্য যে পরিমাণ বাড়ানো হয়, পরে তা আর কমানো হয় না। এটা এ বছরই নয়, দীর্ঘদিন থেকে এ অবস্থা চলে আসছে। কিন্তু ফলপ্রসূ কোনো প্রতিকার আমরা কখনও দেখতে পাই না। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আর্থিক দৈন্যের মধ্যে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। করোনা সেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ফলস্বরূপ খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। বেঁচে থাকার জন্য চাল, ডাল, তেল, নুন কিনতেই যদি ভোক্তার নাভিশ্বাস ওঠে, তাহলে জীবনের অন্যান্য অপরিহার্য জিনিস, যেমন ওষুধ, চিকিৎসা, বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, শিক্ষা প্রভৃতির ব্যয় নির্বাহ হবে কীভাবে? দ্রব্যমূলের ঊর্ধগতির কারণে বাড়তি অর্থ গুনতে গিয়ে সীমিত আয়ের পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। এর ফলে দেশে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সমন্বয় করা হচ্ছে। বাংলাদেশও দাম সমন্বয় করছে। এই দাম সমন্বয়ের প্রভাব শুধু পণ্যমূল্যে নয়, আরও যেখানে যেখানে পড়ার কথা,পড়বে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে দেশে বেসরকারি সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২০ অনুযায়ী, দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং বিভিন্ন পণ্য ও সেবা-সার্ভিসের মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির এই হার ২০১৯ সালে ছিল ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং পণ্য ও সেবামূল্য বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০১৮ সালে এই বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক শূন্য শতাংশ ও ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর মানে গত তিন বছর ধরে দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা চলতি বছর আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সরকার জ্বালানি খাতে ভর্তুকি হ্রাসের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে এর প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা দুর্বিসহ হয়ে উঠবে, যা ভয়াবহ হতে পারে। তবে বিগত দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রতিফলন ঘটেনি। ক্যাব জানিয়েছে, সরকার সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার সঙ্গে যুক্ত ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম বাড়ালেও অকটেন ও পেট্রোলের দাম বাড়ায়নি। ফলে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ও সাধারণ ভোক্তাদের সঙ্গে ন্যায্য বিচার করেনি। সরকার আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দিলেও ১ নভেম্বর থেকে ভারত সরকার পেট্রোলে লিটার প্রতি ৫ রুপি ও ডিজেলে ১০ রুপি হারে উৎপাদন শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংগঠনটির আশা সরকার ভারতের দৃষ্টান্তটি বিবেচনায় নেবে। প্রচণ্ড ঘনবসতিপূর্ণ দেশটি বহু প্রতিবন্ধকতার মধ্যে এখনো অমিত সম্ভাবনার স্বপ্নগুলো উসকে দিয়ে চলেছে। অরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বিষয়টি ভেবে দেখার মতো। বিগত বছরে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ন্যূনতম চাহিদাগুলো মেটানোর বিষয়ে সরকারের সফলতা যথেষ্ট। তবে এর বিপরীতে নতুন বছরে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে পাঁচটি সমস্যা যথাযথ মোকাবেলা করতে না পারলে সরকার তথা দেশটির যাবতীয় সফলতা ম্লান হয়ে যেতে পারে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ধর্মীয় গোঁড়ামি, দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং রুচির অবক্ষয় দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। সব কিছু ছাপিয়ে রক্ত-মাংসের শরীরে সরাসরি আঘাত আসে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উচ্চমূল্য। ক্রয়ক্ষমতার ক্ষেত্রে ধনী-দরিদ্র শ্রেণির বৈষম্য সেই অতীতকাল থেকে বহমান। আধুনিক বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ভোক্তা হিসেবে এক বিশাল বাজার দখল করে রেখেছে। বিগত বছরগুলোতে কাঁচাবাজার, শপিং মল থেকে শুরু করে পর্যটনশিল্পে অর্থ ব্যয় করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যয় করার ক্ষমতায় বাজার অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে মধ্যবিত্ত ভোক্তা শ্রেণি। 

কিন্তু নিম্নবিত্তের জন্য নাভিশ্বাস তোলা লাগামহীন দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকার কিংবা বিরোধী পক্ষে কোনো সাড়া মেলে না। প্রতিটি সচেতন নাগরিক বোঝে আড়ালে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য নিয়ে নির্লজ্জ বাণিজ্য করে চলছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। কার্যত রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া প্রবল থাকায় অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না এবং এই বিষয়ে কার্যকর সমাধানের আশা নেই বললেই চলে। কখনো মিডিয়ার চাপে সরেজমিন সীমিত আকারে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চললেও লাভের ভাগ যায় পিঁপড়ার পেটে। কাগজে-কলমে মধ্যম আয়ের দেশ হলেও টিসিবির মাধ্যমে কম দামে পণ্য বিক্রির লাইনে মধ্যবিত্ত শ্রেণির অপেক্ষমাণ চেহারাগুলো দেখে শঙ্কা জাগে। বিশেষ করে কভিডজনিত প্রতিক্রিয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর মলিন চেহারাগুলো ৯৭ শতাংশ জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিয়েও আলোকিত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ দিন শেষে দ্রব্যমূল্যের ভয়ংকর ঊর্ধ্বগতির কারণে বাংলাদেশের চলমান অর্থনীতির এই নীরব দুঃখ এবং গোপন অর্থনৈতিক বেদনা চিত্রিত করতে লব্ধপ্রতিষ্ঠ শিল্পীদের তুলি কিংবা ক্যানভাস রহস্যজনকভাবে নীরব। তবে নতুন বছরে এই অবস্থা পরিবর্তনে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে উন্নীত করতে পারলে আশা করা যায় সরকার ও জনগণ উভয়েই ব্যাপক উপকৃত হবে। রাস্তাঘাট ও মহাসড়ক নির্মাণ,যত্রতত্র বসতবাড়ি নির্মাণ,শিল্পায়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে দেশ প্রতিবছর প্রায় ৬৯ হাজার হেক্টর কৃষিজমি হারাচ্ছে। যেমন ধরুন, কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে বিলের মাঝখান দিয়ে পাকা রাস্তা কিংবা মহাসড়ক নির্মাণ করা হলো। বছর ঘুরতেই এই পাকা রাস্তা বা মহাসড়কের দুই পাশে দোকানপাট ও বসতবাড়ি গড়ে উঠতে দেখা যায়। সময়ের পরিক্রমায় এর পরিসর বাড়তে বাড়তে একসময় পুরো বিলই হারিয়ে যায়। আজ যেখানে ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে ঠাসা, শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিতে ফিরে গেলে দেখতে পাব সেসব এলাকায় ছিল সবুজ ফসলের মাঠ। 

স্বাধীনতা পরবর্তী বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় তিন গুণ। এই বাড়তি মানুষের বসতভিটা বানাতে ক্রমেই মানুষ ফসলি জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে। তা ছাড়া শিল্পকারখানার জন্য কৃষিজমির ব্যবহার তো আছেই। ইদানীং ধনিক শ্রেণির রিসোর্ট, বাংলো বা বাগানবাড়ি তৈরির শখও কৃষিজমি ধ্বংসের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। মোদ্দাকথা, আমাদের ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রীয়-সব অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে কৃষিজমি বলির পাঁঠা হচ্ছে। অন্যদিকে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন এবং নিম্নমানের অবকাঠামো গড়ে উঠছে। তাহলে কি আমাদের প্রপৌত্ররা উত্তরাধিকার সূত্রে কৃষিজমিহীন ইট, পাথর ও কংক্রিটের একটি আস্ত জঙ্গল পেতে যাচ্ছে? সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই পরিস্থিতির আশু মোকাবিলা করতে না পারলে বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ৫০ বছরে কৃষিজমি প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং দেশ স্থায়ী খাদ্যঝুঁকিতে পড়বে। তা ছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতি একেবারে ধসে যাবে। মনে রাখা প্রয়োজন,কৃষিসহ গ্রামীণ অর্থনীতির শক্তিশালী অবস্থানের ফলে অর্থনীতিতে করোনার আঘাত তেমন টের পায়নি। তাই যেকোনো মূল্যে কৃষিজমি বাঁচাতে আমাদের সর্বোচ্চ উদ্যোগী হতে হবে। এ জন্য ব্যাপক জনসচেতনতার মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারেব্যবস্থা শক্তিশালী করণের মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনায় ইউনিয়ন পরিষদকে সংশ্লিষ্ট করাসহ ভূমি ব্যবস্থাপনা আইনি কাঠামোতেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। সরকারি স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে তিন ফসলি ও দুই ফসলি জমি অধিগ্রহণ একপ্রকার নিষিদ্ধ হলেও সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষায় বিষয়টির প্রতিফলন অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় না। ক্রমবর্ধমান মাথাপিছু আয়ের সুফল সাধারণ জনগণ কতটুকু ভোগ করতে পারছেন,তা নিয়ে যেমন সমালোচনা বাড়ছে, অন্যদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। এমতাবস্থায় খাদ্যদ্রব্যের মূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। 

টাস্কফোর্স গঠনে যদিও এক কোটি পরিবারকে বিশেষ কার্ডও দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে কয়েকটি নিত্যপণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে পাচ্ছে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ। কিন্তু এগুলো আপৎকালীন সমস্যা কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টামাত্র। এটি সাময়িকভাবে সমাধান হলেও সমস্যার গভীরে হাত না দিলে স্থায়ীভাবে এ সংকট থেকে দেশ মুক্ত হতে পারবে না। তাই সমস্যার তল খুঁজে তার মূলোৎপাটন করতে হবে। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির বিশ্লেষণে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী বা আড়তদারদের অবৈধভাবে পণ্য মজুতের বিষয়টি সাধারণত সামনে আসে। তা ছাড়া পেঁয়াজ-রসুনসহ কিছু খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে যেসব দেশ থেকে তা আমদানি করা হয়, সেসব দেশের রপ্তানিনীতি পরিবর্তনকেও দায়ী করা হয়। এসবের সঙ্গে এবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধিকেও দায়ী করা হচ্ছে। ফড়িয়া, আড়তদার, পাইকার, ক্ষুদ্র কারবারিসহ মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য এবং গণপরিবহন- ব্যবস্থায় অবৈধ চাঁদাবাজি তো আছেই। যার কারণে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে পণ্যের দামে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ গুণ পার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু এগুলো মূলত সমস্যার আইসবার্গের ওপরের অংশমাত্র। সমস্যার মূলে প্রথমে রয়েছে কৃষিজমির পরিমাণ দ্রুত কমে যাওয়া। ফলে চাল, ডালসহ প্রধান প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদনে চাহিদার তুলনায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছি। অন্যদিকে খাদ্যশস্য উৎপাদন লাভজনক না হওয়ায় অনেক কৃষক এখন ফলমূল ও অর্থকরী ফসল উৎপাদনে বেশি ঝুঁকছেন। এর ফলেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে ভাটা পড়ছে। তবে বিগত কয়েক দশকে বোরোসহ উচ্চফলনশীল খাদ্যশস্যের আবাদ বৃদ্ধি এবং একই জমিতে একাধিকবার ফসল উৎপাদনের হার বৃদ্ধির ফলে হেক্টরপ্রতি ফসল উৎপাদন বহু গুণ বেড়েছে। আর সরকারের উদার আমদানিনীতি তো আছেই। ফলে খাদ্যশস্যের ঘাটতিজনিত সমস্যার তীব্রতা তেমন অনুভূত হয়নি।

লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক raihan567@yahoo.com