বাংলাদেশের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা এবং এর উপকারীতা

181

মোঃ মজিবর রহমান শেখ, বাংলাদেশের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ একটি দীর্ঘমেয়াদী ও সামষ্টিক পরিকল্পনা, যা দেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত বিবর্তনাধীন সমস্যাগুলো বিবেচনা করে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নকে সহায়তা করার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনার অনুসরণে এই পরিকল্পনা নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় প্রণীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১০০ বছরে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হিসেবে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ কে আখ্যায়িত করেছিল। বাংলাদেশ সরকার পানি সম্পদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাব্য প্রভাব প্রশমনে এই পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এই পরিকল্পনার আওতায় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জসমূহ বিবেচনা করে দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নকে সহায়তার জন্য প্রণীত হয়েছে। এই পরিকল্পনায় ৩টি জাতীয় লক্ষ্য এবং ব-দ্বীপ সংশ্লিষ্ট ৬টি অভীষ্ট নির্ধারিত হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে নির্ধারিত ৩ লক্ষ্য নিচয় (১) ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ, (২) একই সময়ে মধ্যম আয়ের দেশের সক্ষমতা অর্জন এবং (৩) ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ দেশে উত্তরণকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এই ৩টি সার্বিক লক্ষ্য নিচয়ের আওতায় এই শতাব্দীতে অর্জনীয় ৬টি অভীষ্টের মোড়কে (১) বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন উৎসারিত বিপর্যয় থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, (২) পানির নিরাপত্তা ও পানি ব্যবহারে অধিকতর দক্ষতা অর্জন, (৩) সমন্বিত ও টেকসই নদী এলাকা ও মোহনা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, (৪) জলা ও বাস্তু ভূমির সংরক্ষণ ও যথোপযুক্ত ব্যবহার (৫) অন্ত ও আন্তঞ্চলীয় পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করণ এবং (৬) ভূমি ও পানি সম্পদের সমন্বিত সর্বোত্তম ব্যবহার প্রসারণকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এর আওতায় প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ৮০টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫টি ভৌত অবকাঠামো সৃজন ও উন্নয়ন বিষয়ক এবং ১৫টি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং গবেষণা বিষয়ক। সঞ্চয় বাড়ানোর সুপরিকল্পিত কার্যক্রমের মধ্যে অতিরিক্ত অর্থ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আহরণ ও প্রযুক্তকরণ কঠিন হবে না বলে মনে হয়। উল্লেখ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের পর্যায়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে লক্ষ্য ইতোমধ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার গ্রহণ করেছে, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০-এর ৩টি শক্তিশালী প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, কৃষি (মৎস্য ও পশু সম্পদসহ), জলবায়ুর প্রতিকূলতা ও শিক্ষার উন্নয়ন। এই ৩ ক্ষেত্রে বিদ্যমান অবস্থা, বিবর্তন পর্যায় ও ইপ্সিত প্রগতি বিষয়ে এই পরিকল্পনায় সুচিন্তিত ও বিস্তারিত করনীয় সুপারিশ করা হয়েছে। আর দৃশ্যত এর দুর্বল দিক হিসেবে রয়ে গেছে অর্থায়ন এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া ও দৃশ্যপট। সে অনস্বীকার্য যে, সাম্প্রতিক কালের উন্নয়ন সত্ত্বেও দেশজ সঞ্চয় বাড়ানো ও বিনিয়োগে অধিকতর উৎপাদনশীলতা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যথা ইপ্সিত মাত্রা ও গতিতে অগ্রসর হওয়ার পরিধি বিস্তৃত। নিঃসন্দেহে এই দুই ক্ষেত্রে অধিকতর বিস্তৃত, বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ ও প্রক্ষেপন প্রয়োজন। বিশেষত ব্যক্তি খাত এই ক্ষেত্রে কিভাবে অধিকতর উৎপাদনশীল হবে এবং দেশজ সঞ্চয়ের আরও ফলপ্রসূ মাত্রায় কিভাবে ব্যাংক ও আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে প্রয়োজন অনুগামী প্রযুক্ত করা যাবে এবং এই প্রক্রিয়ায় দারিদ্র্য বিমোচন কিভাবে ও কি মাত্রায় নগর ও গ্রামাঞ্চলে দ্রুততর করা যাবে, তার দিকনির্দেশনা সফল পরিকল্পনার অতীব প্রয়োজনীয় উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করে অগ্রসর হওয়া অভিপ্রেত। এসব কথা বলার পর অনস্বীকার্য যে স্বাধীন সত্তায় সমৃদ্ধি অর্জনের যে সাংবিধানিক অনুজ্ঞা (সংবিধানের প্রস্তাবনা) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছেন, তাঁর পথ ধরে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এক বিশাল ও বস্তুনিষ্ঠ পদক্ষেপ। দেশের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কাঠামোর যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০কে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প ও কার্যক্রমের মোড়কে অন্যান্য প্রকল্প ও কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বিত করে প্রযুক্তকরণ নিঃসন্দেহে লক্ষ্যানুগ হবে এবং এই পথেই সমকালীন প্রজন্ম থেকে সামনের প্রজন্মের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার দেয়া সম্ভব ও দৃশ্যমান হবে।