পূর্ব এশিয়ার স্থিতিশীলতা প্রশ্নে ন্যাটোর তৎপরতা

103
রায়হান আহমেদ তপাদার:

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার ক্রমশ ভেঙে পড়ার চিত্র কয়েক দশক ধরেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় ২০০১ সালে চীনের অন্তর্ভুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। সামরিক ও কৌশলগত সক্ষমতা বাড়িয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে বেইজিং এখন নিঃসন্দেহে একটি প্রভাবশালী শক্তি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীনই একমাত্র দেশ নয়; আরও বেশ কিছু দেশ শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। ভ্লাদিমির পুতিনের সংশোধনবাদী নেতৃত্বে রাশিয়াও বিশ্বশক্তি হিসেবে ফেরার চেষ্টায় আছে। এই চিন্তা থেকে রুশ প্রেসিডেন্ট এখন রাজনীতিতে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে। পুতিন চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা এত উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭ সম্প্রতি চীনের সঙ্গে সম্পর্কের উদ্দেশ্য পরিবর্তন করেছে। আগের বিচ্ছিন্ন হওয়া অবস্থান থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আদান-প্রদান বন্ধ করার অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাস্তবতা হলো, বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো ঝুঁকিমুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও দুই পক্ষের অংশগ্রহণ প্রয়োজন এবং দুই পক্ষের মধ্যে একটি সাধারণ লক্ষ্য থাকতে হয়। ঝুঁকিমুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্য সম্ভবত স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু যোগাযোগের মাধ্যম যেখানে খোলা রাখা হয়েছে, তখন এর সারবস্তুটা পরিষ্কার হচ্ছে না। একটি কার্যকর সংলাপের জন্য প্রথম যে পদক্ষেপটি নেওয়া উচিত তা হলো বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও ভূকৌশলগত প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া। এসব প্রতিযোগিতা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের উত্তেজনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই দুষ্টচক্র থেকে বের হয়ে আসতে হলে অবশ্যই এসব প্রতিযোগিতা বাদ দিতে হবে এবং নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এসবকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।জাতীয় নিরাপত্তার নামে বাণিজ্য নীতিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলে ভূকৌশলগত উত্তেজনা প্রশমন তো হয়ই না, বরং অর্থনৈতিক সম্পর্ক থেকে দুই পক্ষের লাভবান হওয়ার যে সম্ভাবনা, সেটি নষ্ট করে। 

২০১০ সালে ভূখণ্ডগত বিরোধের জেরে চীন জাপানে তাদের দুষ্প্রাপ্য খনিজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। ২০২০ সালে কোভিড মহামারির উৎপত্তিস্থল নিয়ে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানালে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় চীন। এ ধরনের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ চূড়ান্ত অর্থে অকার্যকর। যুক্তরাষ্ট্র একইভাবে চীনে তাদের অগ্রসর প্রযুক্তির মাইক্রো চিপস রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা একধরনের অর্থনৈতিক জবরদস্তি। সব অগ্রসর অর্থনীতির দেশ যদি একসঙ্গে ও চিরতরে চীনকে ঠেকানোর নীতি না নেয়, তাহলে প্রযুক্তি খাতে দীর্ঘ মেয়াদে আমেরিকানদের আধিপত্য ধরে রাখার কোনো নিশ্চয়তা নেই। চীনের প্রভাব মোকাবিলা করতে গিয়ে পূর্ব এশিয়ায় ন্যাটো ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ধরনের পদক্ষেপ সামরিক জোটটির ইউরোপীয় সদস্যরাষ্ট্রগুলোর জন্য কৌশলগত দিক থেকে বড় বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। চীন ও ন্যাটোর মধ্যে এতে উত্তেজনা বাড়তে বাধ্য। একই সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে গড়ে ওঠার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। চীনকে ধরার কৌশল ইউরোপের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাস্তব কোনো লাভ বয়ে আনবে না। এটি অবধারিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করবে। ওয়াশিংটন মরিয়াভাবে বৈশ্বিক আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যদিও পূর্ব এশিয়া থেকে ন্যাটো তাদের নতুন সদস্য নিচ্ছে না। কিন্তু ওই অঞ্চলে ‘সমমনা’ দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে ন্যাটো। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড-এই দেশগুলো ন্যাটোর বৈশ্বিক অংশীদার থেকে সম্পর্কের নতুন আরেক স্তরে প্রবেশের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। যেটিকে ন্যাটো নাম দিয়েছে, ইনডিভিজুয়ালি টেইলরড পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম (আইটিপিপি)। ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন শুরু করলে ন্যাটোর সঙ্গে জাপানের কৌশলগত সম্পর্ক বাড়তে শুরু করে। 

গত জুলাই মাসে লিথুয়ানিয়ায় ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে পশ্চিমা সামরিক জোটটির প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমাদের কোনো অংশীদারই জাপানের মতো এতটা ঘনিষ্ঠ নয়। আরও বলিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক স্থাপনের পদক্ষেপ হিসেবে টোকিওতে ন্যাটো লিয়াজোঁ কার্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নেয়, এশিয়ার ক্ষেত্রে যা প্রথম। কিন্তু ন্যাটো ও চীনের মধ্য উত্তেজনার আগুন দীর্ঘায়িত রাখার কৌশল ভেবে সেই আশঙ্কা থেকে ন্যাটো পরিকল্পনাটি আপাতত লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ সতর্ক করেছেন যে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ হবে বড় ধরনের ভুল। অথচ আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ব এশিয়ায় ন্যাটো সম্প্রসারণের লক্ষ্য হচ্ছে, সমুদ্র নিরাপত্তা, নতুন প্রযুক্তি, সাইবার, জলবায়ু পরিবর্তন-এসব বিষয়ে সহযোগিতা সম্প্রসারণ। কিন্তু বাস্তবে এই সম্প্রসারণের উদ্দেশ্য হচ্ছে চীনকে ঠেকানো। ন্যাটো এখন খোলাখুলিভাবে বলছে, আমাদের স্বার্থ, নিরাপত্তা ও মূল্যবোধের ওপর চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। কিশিদার সঙ্গে বৈঠকে স্টলটেনবার্গ চীনের বিশাল সামরিক আয়োজন এবং পারমাণবিক শক্তির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। স্টলটেনবার্গের এই উদ্বেগ নিশ্চিতভাবেই কিশিদার কানে মন্ত্রের মতো শোনাবে। কেননা ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে কিশিদা নিরলসভাবে চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু পূর্ব এশিয়ায় ন্যাটো তার সামরিক ভূমিকা সম্প্রসারণ করলে তাতে ইউরোপের নিরাপত্তা কীভাবে লাভবান হবে তা বলা মুশকিল। কেননা এতে নির্দিষ্ট করেই বেইজিংকে শত্রু ভাবাপন্ন করে তোলা হবে। এ ব্যাপারে বিস্ময়ের কিছু নেই যে ন্যাটোর এই কথাবার্তা ও পদক্ষেপে সোচ্চারভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। চীনের ভয় হচ্ছে, ন্যাটোর সঙ্গে একই ছাতার নিচে সমবেত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশগুলো আরও বেশি চীনবিরোধী চরিত্র ধারণ করবে। 

বেইজিংয়ের এই অবস্থানের বিরোধিতা করে ন্যাটো বলেছে, ওই অঞ্চলে ন্যাটোর সামরিক উপস্থিতি ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্য থেকে নয় এবং ধরনের দিক থেকে আত্মরক্ষামূলক।ন্যাটোর এই দাবি বেইজিংকে আশ্বস্ত করতে পারছে না। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের সব বিশেষজ্ঞই এ ব্যাপারে একমত যে অন্য রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সঠিকভাবে বুঝতে পারা অসম্ভব একটা ব্যাপার। ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রগুলো প্রায়ই চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে বেইজিং স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। কিন্তু ন্যাটোর কর্মকাণ্ড যে পূর্ব এশিয়ার স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করছে, সেটা তারা বুঝতে পারছে না কিংবা বুঝতে চাইছে না। আর এটা এমন এক পদক্ষেপ, যেখানে বেইজিং প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য। ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়, এ ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টির পেছনে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা নির্দিষ্ট করেই সাধারণ জ্ঞানের অভাবের কথা বলে থাকেন। এটিকে তাঁরা নিরাপত্তা প্রহেলিকা বলেন। পূর্ব এশিয়ায় ন্যাটোর এই মাখামাখি সম্পর্ককে চীনের নেতারা যদি হুমকি বলে মনে করতে থাকেন তাহলে তারা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে সামরিক শক্তি বাড়াবে। নতুন জোট গড়ে তুলবে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন যদি এখন রাশিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে, তাহলে ইউরোপের নিরাপত্তার ওপর প্রভাব পড়বে।কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর নিরাপত্তা প্রহেলিকা তত্ত্বে আর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। আমরা যদি নিরাপত্তা প্রহেলিকার তত্ত্ব মেনে নিই, তাহলে ন্যাটোর সম্প্রসারণ চেষ্টার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করেছে-এই অজুহাত মেনে নিতে হবে। এটা অবশ্যই সত্য যে রাশিয়ার আগ্রাসন অবৈধ ও অন্যায্য। কিন্তু এটাও সত্য যে প্রতিটি নতুন সদস্য আত্মরক্ষার কথা বলে ন্যাটোতে যুক্ত হলেও ন্যাটো সম্প্রসারণকে হুমকি বলে মনে করেছিল রাশিয়া। যুদ্ধে আবেগই প্রভাব বিস্তার করে। বিস্তৃত ভূগোলজুড়ে সম্প্রসারণের যে বিপদ, ইউক্রেন যুদ্ধের পর সেটা বুঝতে পারছে না ইউরোপ। 

পূর্ব ইউরোপের সঙ্গে ন্যাটোর নিরাপত্তার বিষয়টি সরাসরি যুক্ত হলেও পূর্ব এশিয়ার ক্ষেত্রে তাদের গভীর সামরিক সম্পৃক্ততার কোনো কারণ নেই। এটা শুধু চীনের সঙ্গে তাদের শত্রুতাই বাড়াবে। এ বছরের শুরুতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ সঠিকভাবেই বলেছেন, এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ হবে ইউরোপের জন্য ফাঁদ ছাড়া কিছু নয়। ভূকৌশলগত প্রতিযোগিতাকে সফলভাবে দূরে সরিয়ে রাখতে হলে জাতীয় নিরাপত্তাকে ‘হয় জিত, না হয় হার’ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অন্য পক্ষের ওপর ভূকৌশলগত আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে কেবল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়তে থাকবে এবং তাতে অস্ত্র প্রতিযোগিতা চলতে থাকবে। অনিবার্য ভাবেই এর ফলাফল দুই পক্ষের পরাজয়। সর্বোচ্চ সম্পদ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন আন্তনির্ভরতা-অ্যাডাম স্মিথের কৌশল একটা দেশকে কম নিরাপত্তা দেয় না। দেশ গুলোকে অবশ্যই অন্য দেশের ওপর যে জবরদস্তিমূলক তৎপরতা, তা বন্ধে সরাসরি সমঝোতার পথে যেতে হবে। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি, নিরপেক্ষ অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ তাদের নিরাপত্তা চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে। অর্থনৈতিক জবরদস্তি শেষ পর্যন্ত অকার্যকর অস্ত্র। শিল্পনীতির যেসব নেতিবাচক প্রভাব, সেটাতে আরও ইন্ধন দেয় প্রযুক্তি খাতের বিভেদ মূলক প্রতিযোগিতা। প্রতিটি দেশই শিল্পনীতি প্রণয়ন করে। দৃষ্টান্ত হিসেবে সাম্প্রতিক কালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রণয়ন করা ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট কিংবা চিপস অ্যান্ড সায়েন্স অ্যাক্টের কথা বলা যায়। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, খুব কম সংখ্যক দেশই শেষ পর্যন্ত তাদের শিল্পনীতি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে।বেশির ভাগ শিল্পনীতি শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আনতে ব্যর্থ হয়। শিল্প- নীতির সমস্যা হচ্ছে, এটা শুধু দেশের সীমানার মধ্যেই আবদ্ধ থাকে না। ছোট একটা দেশের শিল্পনীতি যখন ব্যর্থ হয়, সেটা সেই দেশের অর্থনীতির ওপর আঘাত হানে। কিন্তু বড় দেশের শিল্পনীতি ব্যর্থ হলে সেটা সেই দেশ, মিত্রদেশ ও বিশ্ব বাজারে গিয়ে আঘাত করে। 

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা নতুন যে অন্যায্য শিল্পনীতি ও অন্যায্য বাণিজ্য তৎপরতা’ বন্ধে চুক্তি করেছে, সেটাই বড় দেশ গুলোর শিল্পনীতি যে বড় ঝুঁকি তৈরি করছে, তা প্রশমনের একটি পথ হতে পারে।শিল্পনীতি কত দিনের জন্য কার্যকর থাকবে, বৈশ্বিক সমঝোতার শুরুর বিন্দুটি সেটাই হতে পারে।অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও শিল্পনীতির ক্ষেত্রে চুক্তিতে পৌঁছাতে হলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে প্রথমেই তাদের ভেঙে যাওয়া আস্থার সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।পশ্চিম ইইউ’র নেতৃস্থানীয় ও শিল্পসমৃদ্ধ দেশগুলোর নীতিগত বাধা অগ্রাহ্য করে যুক্তরাষ্ট্র সেদিন যে পদক্ষেপ নিয়েছিল তারই পরিণতিতে সংঘটিত হচ্ছে আজকের রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ। তাতে জড়িয়ে পড়তে পারে ইউরোপের অন্য দেশগুলো,অক্ষত থাকবে আটলান্টিকের অপর পারের যুক্তরাষ্ট্র।সে কারণেই ন্যাটোর পরিবর্তে তাঁরা ইউরোপীয় নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার অনেক পরে রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিনও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার বাসনা প্রকাশ করেছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন যদিও সোভিয়েত পদ্ধতি কিংবা সেই শিবিরে আর মার্ক্সবাদী কিংবা সমাজ তান্ত্রিক সরকার নেই, তবু যুক্তরাষ্ট্র তার সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের কারণে প্রতিপক্ষ হিসেবে রাশিয়া কিংবা চীনকে মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। কখনো আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, সামরিক পরাক্রম কিংবা আধিপত্য বজায় রাখার কৌশল হিসেবে তাদের ব্যবহার করছে। তাতে ভুক্তভোগী হচ্ছে ইউরোপ ও বিশ্ববাসী। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক দিক থেকে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ এখন সামগ্রিকভাবে এক মন্দার কবলে পড়েছে।মূল্যস্ফীতির কারণে নাভিশ্বাস উঠেছে এসব অঞ্চলের মানুষের। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী কিংবা আধিপত্যবাদী নীতির কারণে একদিন হয়তো ইউরোপে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ভেঙে পড়তে পারে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর ব্রিকসে যোগদানের পরিকল্পনা কিংবা ক্ষমতার এককেন্দ্রিকতা ও ডলারের একাধিপত্য ভেঙে দেওয়ার প্রত্যাশা কি সেই ইঙ্গিত বহন করে না।

লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক 
raihan567@yahoo.com