যুদ্ধবিরোধী সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তাল পশ্চিমা বিশ্ব

15
রায়হান আহমেদ তপাদার:
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যাকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিতে ওয়াশিংটন ডিসি, লন্ডন, বার্লিন, প্যারিস, ইতালিসহ ইউরোপজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশেও ইহুদি সম্প্রদায়ের লোকজন ইসরায়েলের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সমাবেশ করেছেন। হামাসের হামলার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার এবং অনেক নাগরিক ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানালেও গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা বর্ষণ ও সৃষ্ট মানবিক সংকট ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে মানুষের ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুসে, ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ইসরায়েলি সেনা সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। রোমে একটি বিশাল ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে বিক্ষোভকারীরা মিছিল করেছেন। ডেনমার্কের ব্রাব্র্যান্ড, জার্মানির বার্লিনসহ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে বিক্ষভ হয়েছে। সংঘাতের আশঙ্কায় জার্মানি এবং ফ্রান্স ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে। বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ বলেছে যে তারা সিনাগগ এবং ইহুদি স্কুলগুলোতে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। ওই হামলায় জেরে ইসরায়েল যুদ্ধের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়। এতে এখন পর্যন্ত দশ হাজারের বেশি নিহত হয়েছেন এর মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এর মধ্যে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, শিশু হত্যা। এখানেই ক্ষান্ত হয়নি ইসরায়েল! গাজায় বিমান ও আর্টিলারি হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। দখলদার  ইসরায়েলি আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির দাবিতে লন্ডনে স্বরণকালের সর্ববৃহৎ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করা হয়। এটিকে ঐতিহাসিক মিছিল বলেও অভিহিত করেছেন আয়োজকরা। 
লন্ডনে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে প্রায় ৮লাখ মানুষ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ গ্রহণ করেছেন। ১১ নভেম্বর লন্ডনের হাইড পার্ক থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। দখলদার ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে এক মাস ধরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করে আসছেন ব্রিটেনের ফিলিস্তিন পন্থিরা এবং আজকের এই আয়োজন স্বরণকালের সর্ববৃহৎ বিক্ষোভ সমাবেশ। প্যালেষ্টাইন স‌লিডা‌রি‌টি ক্যাম্পেইন, ফ্রেন্ডস অব আল-আকসা, মুস‌লিম এ‌সো‌সি‌য়েশন অব ব্রিটেন, স্টপ দ্য ওয়ার কোয়া‌লিশন, প্যালেস্টাইন ফোরাম ইন ব্রিটেন সহ বেশ ক‌য়েক‌টি সংগঠনের আহব্বা‌নে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। লেবার দলের সাবেক প্রধান জেরমী করবিন সমাবেশে একাত্মতা ঘোষণা করেন এবং বক্তব্য রাখেন, সমাবেশের লোকজন তাকে জনগণের প্রধানমন্ত্রী বলে সম্বোধন করেন। ব্রিটিশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি আপসানা বেগমসহ অনেক প্রতিবাদী বক্তারা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন৷ ফিলিস্তিনপন্থি এ মিছিলে ঝামেলা করতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্যের উগ্রডানপন্থি কিছু দলের সমর্থকরা ঝামেলা এড়াতে উগ্রপন্থিদের ৮২ জনকে আটক করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। মেট্রোপলিটন পুলিশ সার্ভিস বলেছে, শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিতে প্রায় দুই হাজার অফিসার লন্ডনে মোতায়েন করা ছিল। এটি স্বাভাবিক সংখ্যার দ্বিগুণ। কারণ, বিক্ষোভটি আর্মিস্টিস ডের সঙ্গে মিলে গেছে। বিক্ষোভকারীরা যাত্রা শুরু করার সময় 'মুক্ত ফিলিস্তিন'এবং 'এখনই যুদ্ধবিরতি' স্লোগান দিয়ে মুখরিত করেন প্রায় আট লক্ষ মানুষ। লন্ডনে এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ বিক্ষোভ মিছিল আয়োজনের পরিকল্পনাকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীসহ কনজারভেটিব দলের সিনিয়র মন্ত্রীরা অসম্মানজনক হিসাবে বর্ণনা করে আসছিলেন।এটি নিষিদ্ধ করার হুমকি ধামকি দিচ্ছিলেন। কিন্তু মেট্রোপলিটান পুলিশ মিছিল করার নাগরিক অধিকারে পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার পর সরকারের হুমকি-ধামকি কমে আসে। 
পুলিশ প্রধান বলেন যারা রাস্তায় নামতে চায় তাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকাররয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মার্ক রাউলি ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক চাপকে অস্বীকার করে পরিকল্পিত মার্চ নিষিদ্ধ করবেন না। পুলিশ প্রধানের সাথে তার বৈঠকের পর টেন ডাউনিং স্ট্রিট থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে, ঋশি সুনাক ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি মেনে নিয়েছেন যে মেট্রোপলিটন পুলিশকে এটি বাতিল করার আহ্বান সত্ত্বেও প্রতিবাদ কর্মসূচিটি পালন হবে। সকাল থে‌কেই লন্ডনের অ‌নেক ট্রেন ও টিউব চলাচল বন্ধ ছিল। তারপরও ষ্টেশন ও রাস্তায় সকাল থে‌কেই ছিল উপ‌চে পড়া মানু‌ষের ভীড়। নৌপথে অনেক বি‌ক্ষোভকারীরা যাতায়াত করেছেন। লন্ড‌নের বাই‌রের বি‌ভি‌ন্ন শহর থে‌কেও বাস, কার ও ট্যাক্সি নি‌য়েও মানুষ সেন্ট্রাল লন্ড‌নের দি‌কে জ‌ড়ো হ‌তে থা‌কে সকাল থে‌কেই বি‌ক্ষোভকারীরা ব্রিটে‌নের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সু‌য়েলা ব্রেভার- ম্যানের পদত্যাগের দাবি‌তে বি‌ভিন্ন শ্লোগানও দেন। তারা বলেন, গাজা প‌রি‌স্থি‌তি‌কে উত্তপ্ত করার জন্য তার কিছু মন্তব্য দায়ী। অবশেষে বরখাস্ত হলেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যান।দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তাকে বরখাস্ত করেছেন। লন্ডনে ফিলিস্তিনিপন্থি একটি বড় বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের দায়িত্ব পালন নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন ব্রাভারম্যান। তিনি ওই বিক্ষোভকে বিদ্বেষমূলক মিছিল বলেও মন্তব্য করেন। যার জেরে লন্ডনে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পায়। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া ব্রেক্সিটকে ঘিরে ব্রিটিশ রাজনীতিতে যে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখনো অব্যাহত আছে। ব্রিটিশ রাজনীতিতে আবার নতুন এক চমক দেখালেন সাত বছর আগে ডাউনিং স্ট্রিট ছেড়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে আবারও রাজনীতিতে ফেরার মধ্য দিয়ে। 
সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও মন্তব্যের ফলে তাঁকে বরখাস্ত করতে ঋষি সুনাকের ওপর চাপ ক্রমে বাড়ছিল। বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে লন্ডনে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে নগর পুলিশের সমালোচনা করার পর থেকে। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়োগ পেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলিকে। যাইহোক,ব্রিটিশ রাজনীতির এই উত্থান-পতন ও নতুন মেরুকরণ আবারও প্রমাণ করল রাজনীতিতে আসলেও শেষ বলে কিছু নেই। তবে এমন সময়ে ক্যামেরন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন যখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা চলছে।সময়টা চ্যালেঞ্জিং হলেও ক্যামেরন তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্য সংকটসহ নানা ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। বিশ্বজুড়ে বড় এই পরিবর্তনের সময়ে মিত্রদের পাশে দাঁড়ানো, অংশীদারত্ব শক্তিশালী করা এবং আমাদের মতামতগুলো সবার কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করা আমাদের দেশের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যাহোক, ফিরে আসা যাক ভিয়েতনামের সেই করুন যুদ্ধবিরোধী মহাসমাবেশের দিকে। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামের জনগণ ফরাসি উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য যুদ্ধ করেছিল। এই যুদ্ধকে বলা হয় প্রথম ইন্দোচীন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের শেষে ভিয়েতনাম ফারাসি শাসন থেকে মুক্ত হয়। কিন্তু ভিয়েতনামকে তখন উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। এই বিভাজনে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় পুষ্ট দল উত্তর ভিয়েতনামের নিয়ন্ত্রণ পায়। অন্যদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনাম পায় সমাজতন্ত্র-বিরোধী দল।উত্তর ভিয়েতনামের শাসকরা উভয় ভিয়েতনাম একত্রিত করে একটি অখণ্ড ভিয়েতনাম গঠনের জন্য চেষ্টা শুরু করেছিল। 
এই সময় উত্তর ভিয়েতনামের এই উদ্যোগকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রাণপণে বাধা দেওয়া শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করেছিল যে, যদি উভয় ভিয়েতনাম মিলিত হয়ে একটি শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠিত হয়। তা হলে সমাজতন্ত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়বে। এবং এই সূত্রে ওই অঞ্চলে তাদের আধিপত্য ক্ষুণ্ণ হবে একই সাথে সোভিয়েত রাশিয়া বা চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। এই ভাবনা থেকে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনাম সরকারকে সহায়তা দেওয়া শুরু করে এবং ক্রমে ক্রমে এই যুদ্ধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। মার্কিন সৈন্যরা নির্মমভাবে গেরিলা এবং সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করেও এই যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। এই যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি সম্মানজনক উপায় বের করার চেষ্টা করে। এই লক্ষ্যে তারা সমাজ তান্ত্রিক যোদ্ধাদের সাথে ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে প্রকাশ্যে এবং গোপনে বেশ কিছু বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭০ সালে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করা হয়। এই সময়ে ভিয়েতনামের পক্ষ থেকে জুয়ান থুই, লি ডাক থো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার আলোচনা করেন। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৭৩ সালের ২৩ জানুয়ারি, প্যারিসে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে- ৮০দিনের মধ্যে ছিল মার্কিন যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেয়া, যুদ্ধবিরতি কার্যকৱর করা এবং  দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাধারণ নির্বাচন দেওয়া। ২৩ জানুয়ারি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও, কিছু অঞ্চলে তখনও যুদ্ধ চলছিল। ইতিমধ্যে ২৯ মার্চের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা প্রত্যাহার করে। কিন্তু উত্তর ভিয়েতনামে বোমাবর্ষণ অব্যাহত ছিল। এরই সূত্রে উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে।১৯৭৩ সালের মে ও জুন মাস পর্যন্ত কিসিঞ্জার এবং থো শান্তি চুক্তির উত্তরণে প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। 
১৯৭৩ সালের ১৩ই জুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর ভিয়েতনাম যৌথভাবে প্যারিস চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাক্ষর করে। ১৯৭৫ সালে সাম্যবাদী শাসনের অধীনে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হয়। ১৯৭৬ সালে এটি সরকারীভাবে ভিয়েৎনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নাম ধারণ করে। অনেকেই মনে করেছিলো আমেরিকার মত পরাশক্তির সাথে ভিয়েতনামের মতো দেশ পেরে উঠবে না। কিন্তু আমেরিকার কাছে থাকা অত্যাধুনিক অস্ত্র, উড়োজাহাজ ও ক্ষেপনাস্ত্রকে হার মানিয়ে ভিয়েতনামীরা দৃঢ় মনোবল আর গেরিলা যুদ্ধনীতি দিয়ে বাজিমাত করে দিয়েছিলো। এই যুদ্ধের মাধ্যমে ভিয়েতনাম যে শুধু নিজেদের স্বাধীনতা আনে তাইই নয়, বরং তারা গোটা দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার মুক্তির সূর্যোদয় ঘটায়। তাই আমেরিকার এই পরাজয় মার্কিন রাজনীতির ইতিহাসে এক কলংকজনক অধ্যায়। চারদিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উন্নতি সত্ত্বেও মানুষের জীবনে এখনও স্থিতিশীল নয়। শান্তিময় জীবন-যাপনের জন্য মানুষের মাঝে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য এবং মানবিকতা প্রয়োজন। কিন্তু মানুষ তার মনুষ্যত্ব ভুলে এখনও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ফলে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় না। উপরন্তু কিছু মানুষের সিদ্ধান্তে হওয়া যুদ্ধের খেসারত দিতে হয় সাধারণ মানুষকে। সাধারণ মানুষ চায় নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতা সত্ত্বেও বিশ্ব থেকে যুদ্ধ নির্মূল হয়নি। এমনকি চলমান যুদ্ধ বন্ধও হয়নি। সব সময় এই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও যুদ্ধ অতীতেও চলেছে এবং বর্তমানেও চলছে। আর এর বলি হয়েছে এবং হচ্ছে  অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ। যুদ্ধের কারণে সারা জীবনের জন্য শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করে হাজারো মানুষ। এই যুদ্ধ মানবতার জন্য কখনো কোনো ধরনের কল্যাণ বয়ে আনেনি এবং ভবিষ্যতেও আনবে না। যুদ্ধ মানে মানুষের জীবনে কেবল দুঃখ, কষ্ট আর ধ্বংস। যুদ্ধ নামক এই ধ্বংসযজ্ঞ পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য দূর হয়ে যাক এটা সকলের কামনা। আর এই যুদ্ধ বন্ধ হলেই কেবল পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা পাবে এবং মানবতা মুক্তি পাবে। 




লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক raihan567@yahoo.com