প্রচার আড়ালে এক মহাজাগরণ চরমোনাই মাহফিল

74

ছাইদুর রহমান নাঈম:

বরিশালের চরমোনাই ইউনিয়নে শুরু হচ্ছে ২৮.২৯ ও ১ মার্চ ফাল্গুনের ঐতিহাসিক চরমোনাই মাহফিল। আশপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ৭ টি সুবিশাল মাঠে ৩ দিনব্যাপী এই মাহফিলটি হয়৷ মাঠের আয়তন অনুযায়ী আনুমানিক অর্ধ কোটি মানুষের এক মহামিলনের সমারোহ ঘটে। নিরাপত্তা ও মাইক, লাইটিং থেকে শুরু করে হাসপাতাল সবগুলো নিয়ন্ত্রণ করে অন্তত ২০ হাজার নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক। প্রতি বছর মাহফিলের পরিধি বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির আয়োজনে এটি হয়৷ 

দেশ বিদেশের নামকরা ইসলামী স্কলার ও আলেম ওলামারা এতে অংশ নেন৷ আমি এখন পর্যন্ত দুইবার মাহফিলে গিয়েছি৷ বিশেষ করে কৌতুহল থেকে জানা ও বুঝার জন্য। মাহফিলের পরিবেশ ও নিরাপত্তা ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ দেখে মনে হলো যেনো ভুলে কোন ইসলামী দেশে চলে এসেছি৷ সবকিছু ধর্মীয় পরিবেশে হয়ে থাকে৷ তিনদিন অবস্থান করে মানুষের সাথে কথা বলে বুঝলাম আসলেই এটি হচ্ছে দিল পঁচে দুর্গন্ধ ছড়ানো মানুষকে আতরের ঘ্রাণে সাজিয়ে তুলার প্রচেষ্টা। আল্লাহ ও ইসলাম বিমুখ মানুষকে ইসলাম ও দ্বীনের পথে আনার এক মহাজাগরণ৷  যে ভাবে ময়লা কাপড় লন্ড্রিতে ধুলায় হয়, তেমনি ওয়াজ নসিহত দিয়ে মানুষকে আল্লাহ ও ইসলামের পথে পরিপূর্ণ আনার চেষ্টা চলে। এবং মানুষের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে এর মাধ্যমে৷

নদীর পাড়ে শান্ত গ্রামটি আল্লাহ আল্লাহ জিকিরে মুখরিত হয়ে ওঠে৷ যেন সন্ধা বেলার পাখির কলকাকলী। দেশের সব জেলা উপজেলা থেকে মানুষ জামাত নিয়ে আসেন৷ জীবনে একবার হলেও এই মাঠে যিনি তিনদিন অবস্থান করবেনা তিনি ইসলামী ভাবগাম্ভীর্য ও সৌন্দর্য দেখা ও অনুধাবন থেকে বঞ্চিত হবেন৷
শুক্রবার দিন যেন মৌমাছির মতো ছুটে আসেন মানুষ। নদী পথে ট্রলার লঞ্চ এর লাইন। সড়ক পথে বিরামহীন গাড়ির আসা। টুপি পাঞ্জাবি পরিহিত সব মানুষের স্রোত এসে মিশে মাহফিলের মাঠে৷ এ এক অন্যরকম পরিবেশ। নিজ চোখে দেখলেই কেবল অনুধাবন সম্ভব। একে অপরের প্রতি আন্তরিকতা চোখে পড়ার মতো৷ যেন সবাই এক মায়ের সন্তান। পথে পথে চলার সময় আল্লাহর জিকির করে চলছে মানুষ। তিন দিনের মধ্যে নামাজ ছাড়া বাকি কোন সময় যেখানে আল্লাহ জিকির বন্ধ হয়না৷ প্রতি ওয়াক্ত জামাতে নামাজ হয় মাঠে৷ চলে তালিম। নামাজ শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষা চলে মাঠে৷

এতবড় মাহফিলে নেই তেমন মিডিয়া কভারেজ৷ যেন এড়িয়ে যাওয়ার মতো৷ প্রায় অর্ধ কোটি মানুষের জমায়েতকে মিডিয়া চোখ বন্ধ করে এড়িয়ে যায়। হাতে গোনা কয়েকটি মিডিয়া কিছু খবর প্রচার করে কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল৷ যানিনা আয়োজকরা কোন উদ্যোগ নেন কিনা৷ দেশে এখন অনেক টেলিভিশন চ্যানেল। আয়োজকরা নিজ খরচে বা উদ্যোগে হলেও একটি মিডিয়াকে হলেও সরাসরি কভারেজ করাতে পারেন৷ দিনে কয়েকবার পুরো মাঠ সরাসরি সম্প্রচার করা হলে পরে এমনি বাকি মিডিয়া আগ্রহ দেখাবে৷ এতে এই জাগরণ ছড়িয়ে পড়বে দেশ দিগন্তে আরো৷ তাও সম্ভব না হলে নিজস্ব মিডিয়া সেল দিয়ে রাস্তা, মাঠ ও একাধিক স্থানের ফুটেজ ও ড্রোন ব্যাবহার করে সম্প্রচার করা যেতে পারে৷
এছাড়াও মাহফিল কমিটির তত্বাবধানে নিজস্ব লোক দিয়ে বাজার স্থাপন ও হোটেল স্থাপন করলে সবার জন্য উপকার হবে৷ কম দামে বাজার করতে পারবে৷ পানির সমস্যা বেশি হয়। নিজস্ব ভাবে পানি ফিল্টারিং করে তা বোতলজাত করে সীমিত দামে  বিক্রি করলে একদিকে পানির ঘাটতি পুরণ হবে অপরদিকে অর্থনৈতিক সাশ্রয় হবে।