একুশ শতকের পুঁজিবাদী ব্যবস্থার জটিল সমীকরণ

33
রায়হান আহমেদ তপাদার:
সমাজতন্ত্র মূলত সামাজিক-নৈতিক একটি পরিণতির দিকে উদ্দিষ্ট। বিজ্ঞান কোনোভাবেই কোনো পরিণতির সৃষ্টি করে না, এমনকি ধীরে ধীরে সঞ্চারিতও করতে পারেনা,বড়জোড় পরিণতিতে পৌছানোর জন্য উপাদানের যোগান দিতে পারে। কিন্তু এই পরিণতিসমূহ কল্পিত হয় সুউচ্চ নৈতিক আদর্শের কিছু ব্যাক্তির দ্বারা। আর যদি এসব অপরিহার্য ও প্রচন্ড পরিণতিগুলি ইতোমধ্যে অর্জিত না হয়ে থাকে তবে,কিছু মানুষ এগুলোকে আত্মস্থ করে এবং সামনের দিকে নিয়ে যায়। এসব মানুষেরাই সমাজের সুস্থির বিবর্তনকে অর্ধসচেতন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।মধ্যযুগে ইউরোপে রাজার মালিকানা ছিল প্রায় সবকিছুতেই। সে সময় জনগণের নিজস্ব সম্পদ বলে কোনো কিছু ছিল না। কৃষকেরা খাজনার বিনিময়ে রাজার রাজ্যে বাস করতেন। তাঁরা জমিতে চাষাবাদ করতেন। কিন্তু সেই জমির মালিকানা তো দূরের কথা, যে হাল দিয়ে তাঁরা জমি চাষ করতেন, তাঁর মালিকানাও তাঁদের ছিল না। তাঁরা সরাসরি ক্রীতদাস হয়ে থাকতেন।
কো’ওলাউ র‍্যাঞ্চ বানাতে চাওয়া এবং এর আগে ধনকুবেরদের ভবিষ্যতের কেয়ামত থেকে বাঁচার জন্য র‍্যাঞ্চ বানাতে চাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে।এর আগে পে-পাল-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা পিটার থিল নিউজিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ডের এওতিয়ারোয়া দ্বীপে একটি ভূগর্ভস্থ ঘর বানানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তখন তিনি সক্ষম হননি। এর জন্য তিনি সেখানে ৭৩ হাজার ৭ শ বর্গমিটার জায়গা কিনেছিলেন। কিন্তু থিল এবং স্থানীয় কাউন্সিলের মধ্যে বিরোধ হওয়ায় তাঁর সেই প্রকল্প বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু জাকারবার্গের ক্ষেত্রে আমরা দেখছি সেখানে এই ধনকুবের এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা যাচ্ছে না। এখানে জাকারবার্গ স্থানীয় মানুষকে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের নামে বুঝিয়েছেন, তাঁদের জীবন যাপন আগের মতোই অটুট থাকবে।
কিন্তু সংরক্ষণের নামে পুরো এলাকা দেয়াল ঘিরে তিনি যেভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে এই বিজনেস মডেলটি সরাসরি সামন্তবাদের দিকে নিয়ে যাবে। এসব ধনকুবেরদের বিস্তীর্ণ এলাকা নিজের দখলে নিয়ে নিজের মত করে সাজানোর কারণ হিসেবে অনেকে বলছেন, এই বড়লোকেরা শুধুমাত্র ভূগর্ভস্থ সুরক্ষিত ঘর বানিয়েই নিজেরা এখন আর নিরাপদ করছেন না; বরং নিজের চারপাশের ইকো সিস্টেমকে পর্যন্ত নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাঁরা নিজেদের সুরক্ষিত করার চিন্তা ভাবনা করছেন। এটা ভাবা খুবই স্বাভাবিক। এর কারণ, বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের মধ্যে এখন দূরের কোনো নির্জন দ্বীপে গিয়ে একান্ত এলাকায় ভূগর্ভস্থ ঘরসহ নির্জন প্রাসাদে বাস করার প্রবণতা অনেক গুন বেড়ে গেছে। বোঝা যাচ্ছে, বিশ্ব নতুন এক ধরনের সামন্ততন্ত্রের দিকে পা বাড়াচ্ছে। অনেকে যুক্তি দিয়ে ভুলতে পারেন, এই সময়ে ‘টেকনো ফিউডালিজম’ বা প্রযুক্তি অমাত্যতন্ত্র অথবা নব্য সামন্ততন্ত্র পুরোটাই উপাত্ত ঔপনিবেশিকতার ওপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এই ডেটা কলোনাইজেশন বা উপাত্ত উপনিবেশ তাঁদের কার্যত সবকিছুর নিয়ন্তা হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। আমরা তাঁদের কথায় একমত। কিন্তু হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে যা ঘটছে তা একেবারেই আদিম সামন্ততন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। ওয়্যার্ড-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,জাকারবার্গের র‍্যাঞ্চে একটি বিশাল আকৃতির ভূগর্ভস্থ বাংকার নির্মাণ করা হবে। জাকারবার্গের ভূগর্ভস্থ বাংকার নির্মাণের খবর প্রকাশ হতেই নানা ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়েছে। এই ধরনের ভূগর্ভস্থ ঘরকে অনেকে অ্যাপোক্যালিপস্ বাংকার বা রোজ কিয়ামতকালীন ভূগর্ভস্থ ঘর বলে অভিহিত করছেন। লোকে প্রশ্ন করছে মার্ক জাকারবার্গ কেন হাওয়াই দ্বীপে গিয়ে ব্যক্তিগত অ্যাপোক্যালিপস্ বাংকার তৈরি করছেন।
শুধু তাই নয়, তাঁরা আরও প্রশ্ন করছেন, জাকারবার্গ এবং তাঁর মতো ধনকুবেররা আসলে কী এমন গোপন কথা জানেন যা সাধারণ মানুষ জানে না? ২০২৪ সালে এমন কী ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে যা আমাদের তাঁরা বলছেন না?অ্যাপোক্যালিপস্ বাংকার বর্তমান সময়ে মার্কিন পপ কালচারে একটি জনপ্রিয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। শুধু জাকারবার্গ নন; তাঁর মতো প্রথম সারির ধনকুবেরদের অনেকেই এই ধরনের ভূগর্ভস্থ বিলাসবহুল ঘর নির্মাণ করছেন। তবে কাউয়াই দ্বীপে জাকারবার্গ তাঁর র‍্যাঞ্চের মধ্যে আরও যেসব স্থাপনা নির্মাণ করছেন, তা যথেষ্ট কৌতূহল জাগাচ্ছে। নতুন অর্থনীতি-বিপ্লবের জনক ও তাঁদের জাদারা এই কমপ্লেক্সে বিশাল বিশাল কয়েকটি প্রাসাদ থাকছে। থাকছে ফুটবল মাঠ। দড়িতে ঝোলানো সেতুর সঙ্গে যুক্ত থাকা কমপক্ষে ১১টি ট্রি হাউস থাকছে। সাগরের পানি বিশুদ্ধ করে সুপেয় পানিতে পরিণত করার যাবতীয় সরঞ্জাম ও বিশাল খাদ্য ভান্ডার এখানে থাকছে। ইতিমধ্যেই জাকারবার্গ তাঁর অনলাইন অনুসারীদের জানিয়ে দিয়েছেন, সেখানে তিনি নিজস্ব খামারে গরু পালন করছেন। একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন, তাঁর গরুগুলো পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার পাউন্ড খাবার প্রতিবছর খেয়ে থাকে।জাকারবার্গের এই ধরনের ফেসবুক পোস্ট দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বলছেন, করপোরেট ধনকুবেররা মূলত মধ্যযুগীয় সামন্ততান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। নিজের শিশুসন্তানকে নিয়ে তোলা ছবি পোস্ট করে জাকারবার্গ বলেছেন, এটি তাঁর সব প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের প্রকল্প। কিনে নেওয়া এই র‍্যাঞ্চের মধ্যেই জাকারবার্গ এবং তাঁর স্ত্রী চ্যান বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র, স্থানীয় উদ্ভিদ সংরক্ষণ কেন্দ্র, অরগানিক হলুদ ও আদার খামার, ইত্যাদি গড়ে তুলছেন।
নয়া অর্থনীতি-বিপ্লবের জনক ও তাঁদের জাদারা এই কমপ্লেক্সে বিশাল বিশাল কয়েকটি প্রাসাদ থাকছে। থাকছে ফুটবল মাঠ। দড়িতে ঝোলানো সেতুর সঙ্গে যুক্ত থাকা কমপক্ষে ১১টি ট্রি হাউস থাকছে। সাগরের পানি বিশুদ্ধ করে সুপেয় পানিতে পরিণত করার যাবতীয় সরঞ্জাম ও বিশাল খাদ্য ভান্ডার এখানে থাকছে।ইতিমধ্যেই জাকারবার্গ তাঁর অনলাইন অনুসারীদের জানিয়ে দিয়েছেন, সেখানে তিনি নিজস্ব খামারে গরু পালন করছেন। একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন, তাঁর গরুগুলো পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার পাউন্ড খাবার প্রতিবছর খেয়ে থাকে। জাকারবার্গের এই ধরনের ফেসবুক পোস্ট দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বলছেন, করপোরেট ধনকুবেররা মূলত মধ্যযুগীয় সামন্ততান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। নিজের শিশুসন্তানকে নিয়ে তোলা ছবি পোস্ট করে জাকারবার্গ বলেছেন, এটি তাঁর সব প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের প্রকল্প। কিনে নেওয়া এই র‍্যাঞ্চের মধ্যেই জাকারবার্গ এবং তাঁর স্ত্রী চ্যান বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র, স্থানীয় উদ্ভিদ সংরক্ষণ কেন্দ্র, অরগানিক হলুদ ও আদার খামার, ইত্যাদি গড়ে তুলছেন। কাউয়াই দ্বীপের স্থানীয় প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণে এসব পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রাণী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞরা মত দিচ্ছেন। জাকারবার্গ একাই যে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে এই ধরনের বিশাল আকৃতির কম্পাউন্ড নিয়ে আবাসস্থল গড়ছেন, তা নয়। আরও অনেক ধনকুবের একই পথে হাঁটছেন। বিশ্বখ্যাত উপস্থাপক অপরাহ্ উইনফ্রে ২০০২ সালে এই দ্বীপপুঞ্জের মাত্রই দ্বীপে ১৬৩ একর নিয়ে একটি র‍্যাঞ্চ গড়ে তুলেছিলেন। এখন সেই খামারের আয়তন সাড়ে ছয় লাখ বর্গমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তি কোম্পানি ওরাকল-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন ২০১২ সালে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের লানাই দ্বীপের প্রায় পুরোটাই কিনে নিয়েছেন।
দুই বছর আগে জাকারবার্গের র‍্যাঞ্চের দক্ষিণ দিকে ধনকুবের ফ্রাঙ্ক ভান্দেরস্লুত দুই হাজার একরের একটি র‍্যাঞ্চ কিনেছেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ওয়্যারড নামের মার্কিন ম্যাগাজিন একটি প্রতিবেদনে বলেছে, ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটার প্রধান নির্বাহী ধনকুবের মার্ক জাকারবার্গ হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের কাউয়াই দ্বীপের একটি বিশাল অংশ কিনে নিচ্ছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাকারবার্গ এবং তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান দ্বীপপুঞ্জটির বিশাল অংশ জুড়ে কো’ওলাউ র‍্যাঞ্চ নামের একটি খামার গড়ে তুলছেন। এই র‍্যাঞ্চ বা খামার বাড়ির কাজ চলছে। কাজটি যখন শেষ হবে তখন এর পেছনে সব মিলিয়ে প্রায় ২৬ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হবে।এই র‍্যাঞ্চটির আয়তন প্রায় ৫৫ লাখ বর্গমিটার। দুই মিটার উঁচু পুরু দেয়াল দিয়ে ওই এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে এবং অসংখ্য নিরাপত্তাকর্মী সেই দেয়ালের বাইরে সাগরের পাড় ঘেঁষে সব সময় টহল দিচ্ছেন। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের কয়েকশ কর্মী জাকারবার্গের এই র‍্যাঞ্চে কাজ করছেন। তবে তাঁরা সংখ্যায় কতজন এবং আসলে তাঁদের কী কাজ, দ্বীপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জাকারবার্গের করা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তা প্রকাশ করা হয়নি। দেখা যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরা হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের এই সব ছোট ছোট দ্বীপ কিনে নিচ্ছেন। এর ফলে সেখানকার স্থানীয় মানুষ সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। তাঁদের এসব স্থাপনা দেখলে মনে হবে যেন বিংশ শতকে হলিউডের সিনেমাগুলোতে কেয়ামতের সময় পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার যেসব দৃশ্য দেখানো হতো, সেই ছবি দেখে তাঁরা উদ্বিগ্ন হয়েছেন এবং নিজেদের নিরাপত্তায় তারা এসব দ্বীপপুঞ্জে সুরক্ষিত বাড়িঘর তুলছেন। আদতে মোটেও তা নয়। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে তাঁরা এসব খামার বাড়ি গড়ে তোলেননি। হ্যাঁ, এ কথা সত্য যে, তাঁদের এসব বাড়ি-ঘরে প্রচণ্ড শক্তিশালী ভূমিকম্প বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো সুরক্ষিত বাংকার এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে।
দৃষ্টান্ত সরুপ বলা যায়, জাকারবার্গের র‍্যাঞ্চে ভূগর্ভস্থ টানেল দিয়ে বহু দূরের ভূগর্ভস্থ অনেক বড় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু আদতে জাকারবার্গ, উইনফ্রে, এলিসন এবং অন্যরা মূলত আরও অনেক বড় উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রকল্প মাথায় রেখে এসব এলাকায় স্থাপনা গড়ছেন।আসলে তাঁরা সেখানে এমন এক নিজস্ব সাম্রাজ্য গড়ে তুলছেন যেখানে তাঁরা নিজেরাই হবেন সর্বেসর্বা। সেখানকার ইকোসিস্টেম তাঁদের দখলে থাকবে। সেখানকার জমির একচ্ছত্র মালিকানা তাঁদের হাতে থাকবে। কৃষি তাঁদের হাতে থাকবে। মানুষের ক্ষেত্রে সামাজিক বিন্যাস আর পারস্পরিক সম্পর্কগুলি নির্দিষ্ট নয় এবং পরিবর্তনশীল। নতুন নতুন কল্পনার সৃষ্টিকারী মানুষের মস্তিষ্ক, ভাষিক যোগাযোগের আশীর্বাদের ফলে এমন উন্নয়নের সম্ভব হয়েছে যা জৈবিক প্রয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই উন্নয়ন সুচিত হয় ঐতিহ্য, প্রতিষ্ঠান, সম্প্রদায়, ভাষা, বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশল অর্জনসমূহ এবং শিল্পকর্মসমূহের দ্বারা। এভাবে বোঝা যাচ্ছে মানুষ কিভাবে তার জীবনকে নিজের কর্মের দ্বারা প্রভাবিত করে এবং এই প্রক্রিয়ায় সচেতন চিন্তা-চাহিদার ভূমিকা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে সকল প্রকার অশুভের উৎস হলো আজকের পুঁজিবাদী সমাজে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য। আমরা আমাদের সামনে দেখতে পাই এক বিশাল উৎপাদক শ্রেণী যারা তাদের যৌথ শ্রমের ফল থেকে পরস্পরকে বঞ্চিত করতে অবিরাম চেষ্টা করছে, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নয়, বরংচ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠিত আইনের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, উৎপাদনের উপায় তথা ভোক্তাপণ্য উৎপাদনের জন্য যে সামগ্রিক উৎপাদকযন্ত্র ও মূলধন জাতীয় দ্রব্যের প্রয়োজন তা আইনীভাবে আধিকাংশেই মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। সেখানকার সমস্ত পরিবেশ প্রতিবেশের মালিক হবেন তাঁরা। সেখানে যাঁরা কর্মী হিসেবে কাজ করবেন, তাঁরা মূলত থাকবেন তাঁদের প্রজা। মধ্যযুগীয় সামন্তদের মতো তাঁরা একুশ শতকের এই পুঁজিবাদী জমিদারি ব্যবস্থা গড়ে তুলছেন।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক 
raihan567@yahoo.com