ভৈরবে চাঁদা দাবীর অভিযোগে সকল প্রাইভেট হাসপাতালে ঔষধ সাপ্লাই বন্ধ

86

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিবেদক ॥ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে প্রাইভেট হাসপাতাল মালিকদের সংগঠন ভৈরব ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবীর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি ভৈরবের বিভিন্ন হাসপাতালে ঔষধ সরবরাহকারী বিভিন্ন কোম্পানীর প্রতিনিধিদের। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালে ভিজিটে গেলে তাদের হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া ও বকেয়া টাকা চাইলে না দিয়ে উল্টো হুমকি ধামকি প্রদান করা। এদিকে ওনার্স অ্যাসিয়েশনের নেতাদের দাবী হাসপাতালে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিনিধিরা রোগীদের হয়রানি ও ডাক্তারদের হয়রানি করে। এছাড়া চাঁদার বিষয়টি তারা অস্বীকার করে। জানা যায়, এ ঘটনায় ৩০ মার্চ থেকে চাঁদাদাবীর অভিযোগ এনে ভৈরবের প্রায় ৩৪টি প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঔষধ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। তবে সাধারণ মানুষের যেন সমস্যা না হয়, সেজন্যে তারা অন্যান্য ফার্মেসী ও সরকারি হাসপাতালে তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফারিয়া নামে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা অভিযোগ তুলেছেন ভৈরব ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী মো. মোশাররফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান কবিরের বিরুদ্ধে। সংগঠনের অনুষ্ঠানে নামে ফারিয়া সংগঠনের প্রতিনিধিদের কাছে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। এ চাঁদা না দেয়ায় এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস, জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস, এরিস্টো ফার্মা ও সোমাটেক ফার্মার প্রতিনিধিকে ভৈরবের সমস্ত ক্লিনিক ও হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয় এবং ডাক্তার ভিজিট করতে বাধা নিষেধ করা হয়। কোম্পানির ঔষধ বিল বাবদ বকেয়া টাকা চাওয়ায় দিতে অস্বীকৃতি ও হুমকির শিকার হয়েছেন তারা। এ ঘটনার প্রতিবাদ অনির্দিষ্টকালের জন্য হাসপাতাল মালিক সংগঠনের আওতাধীন সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডাক্তার ভিজিট, নতুন অর্ডার নেয়া ও পুরাতন অর্ডারের ঔষধ ডেলিভারি থেকে বিরত থাকাসহ সকল ধরনের ঔষধ সাপ্লাই বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন ফারিয়া নামে সংগঠনটি। এবিষয়টি সুষ্ঠু সমাধান না হলে তারা মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন। এ বিষয়ে ভৈরবের সাংবাদিকদের ভিডিও বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন ভৈরব ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী মোশাররফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান কবির। তবে প্রতিদিনের বাংলাদেশ’কে সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান কবির জানান, ফারিয়া’র চাঁদাবাজী অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ভৈরবের সকল প্রতিনিধিকে আমরা বাধা দেইনি। শুধু ৪টি কোম্পানীকে আমরা ঔষধ দিতে ও হাসপাতাল ভিজিট করতে নিষেধ করেছি। রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলা ও রোগীদের ভিড়ে ডাক্তারের রুমে প্রবেশ করাসহ কয়েকটি অভিযোগ এনে চারটি ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিকে সংগঠনের আওতাধীন ৩৪টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যেন ডাক্তার ভিজিট, অর্ডার ও আর্থিক লেনদেন না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রত্যেক হাসপাতালে নোটিশ টানিয়েছেন। এ ঘটনার সাথে চাঁদা চাওয়া না চাওয়ার কোন সম্পর্ক নেয়। তবে ভৈরব ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের একটি প্রোগ্রামের জন্য তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তারা সহযোগিতা করেনি। এর সাথে কোন চাঁদাবাজীর সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে ঔষধ কোম্পানী প্রতিনিধিদের সংগঠন ফারিয়া, ভৈরব শাখার সভাপতি পায়েল মুন্সি ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম সহ বিক্রয় প্রতিনিধিরা অভিযোগ করে বলেন, ভৈরবে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে ও নিজেকে একটি পত্রিকার সম্পাদক দাবী করে ডা. মিজানুর রহমান কবির ঔষধ প্রতিনিধিদের প্রতিনিয়ত হয়রানি করে যাচ্ছে। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ পেতে ফারিয়া সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমরা হাসপাতালের ডাক্তার ও মালিকদের সাথে মিলেমিশেই হাসপাতালের ঔষধ সরবরাহ করে থাকি। তাদের সংগঠনের একটি অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের চাঁদা দাবী করে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান কবির প্রতিটি কোম্পানীর প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ফোনে ফোনে বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা দাবী করে। আমরা কোম্পানীর কাছ থেকে কিভাবে টাকা নেব। তাই নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে তাদের দিতে গেলে টাকার পরিমাণ কম হওয়ায় সংগঠনের সভাপতি মোশাররফ হোসেন আমাদের টাকা না নিয়ে সেখান থেকে ফিরিয়ে দেই। এ ঘটনার পর হঠাৎ করে তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের চারটি ঔষধ কোম্পানীকে হাসপাতালে ঢুকতে নিষেধ করে দেই। কারণ আমাদের এ ৪টি কোম্পানী কোন টাকা লেনদেন করতে পারেনি। ভৈরব ফারিয়ার সভাপতি আল আতিক পায়েল জানান, এঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ডাক্তার মিজানুর রহমান কবির উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, সাপ্তাহিক দুর্জয় দরশনের সম্পাদক ও ওনার্স এসোসিয়েশনের সম্পাদক পরিচয়ে টাকা দাবি করেন। তাদের দাবিকৃত বড় এমাউন্টের টাকা না দেয়ার জেরে তারা ডাক্তার ভিজিট করা সহ অর্ডার দেয়া নেয়া ও বকেয়া টাকা পরিশোধ না করার জন্য হাসপাতাল মালিক সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত নোটিশ লাগিয়ে দিয়েছেন প্রত্যেকটি হাসপাতালে। কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিধিরা বাধা নিষেধ ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতাল ভিজিটে প্রত্যেকটি বিক্রয় প্রতিনিধি নিরাপত্তা জনিত আতংকে রয়েছেন। তাই পুরো বিষয়টি ভৈরবের আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ মন্ত্রী মহোদয়ের আস্থাভাজন ব্যক্তিবর্গদেরকে জানানো হয়েছে সঠিক সমাধানের জন্য। তাদের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচী চলমান থাকবে বলে জানান ফারিয়ার সভাপতি।