সেবাই পুলিশের ধর্ম”নীতি বাক্যকে ধারন করে স্বাধীন দেশে পুলিশের পথচলা শুরু

22

ময়মনসিংহ ফুলপুর প্রতিনিধি, মোঃ কামরুল ইসলাম খান: অনেক সময় পেরিয়ে গেছে।সময়ে সময়ে পুলিশের সেবার মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে।পুলিশ আর নাগরিকের মধ্যে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য একটা লুকোচুরি খেলা ছিল।একটা সময় ছিল যখন পুলিশ নামটাই নাগরিকদের কাছে ভীতি ও আতংকের নাম ছিল। বেশী দিন দূরের কথা নয়  ৮০ দশকের শেষে এবং নব্বই দশকের গোড়ার দিকে পুলিশ নামক পেশাটার সবচেয়ে বড় দুঃসময় গেছে।সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশের কোন গ্রহনযোগ্যতাই ছিলোনা।পুলিশের কাছে কোন গৃহস্থ ঘরের মেয়ে বিয়ে দিতে চাইতোনা।এজন্য অবশ্য পুলিশের দোষটাই বেশী ছিলো।যে দেশে পুলিশের জন্ম হয়েছিলো মানুষকে শোষন করার জন্য।সেই দেশের পুলিশ শাসক শোষক না হয়ে সেবার ব্রত নিয়ে ফিরে আসবে এটা এদেশের মানুষ আজো মেনে নিতে পারেনি।সময় বদলে গেছে।পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এসে সমসাময়িক সময়ে পুলিশ পেশাটা আজ চাকরী না হয়ে সেবায়  রুপান্তরিত হয়েছে।সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ বিভাগে পরীক্ষামুলকভাবে সৃষ্ট বিট পুলিশিং এর মোড়কে মানবিক পুলিশের শ্লোগানটা আজ সর্বাংশে না হলেও অনেকাংশেই বাস্তবায়িত হয়েছে।এদেশের সকল শ্রেনীর মানুষের মধ্যেই পুলিশকে বন্ধু বা সেবক হিসেবে মেনে নেয়ার মানসিকতা জেগে উঠেছে।এটা কতদিন টিকে থাকবে এটা পুলিশ বিভাগের কর্মকাণ্ডের উপরই নির্ভর করবে।বাঙালী মুসলিম সমাজে ভাইয়ে ভাইয়ে এবং গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে স্বার্থ হাসিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব আবহমানকাল ধরে চলে আসছে।শুধুমাত্র স্বার্থ হাসিলের টান সামনে রেখে ভাই ভাইকে,ছেলে পিতাকে,পিতা সন্তানকে,স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে খুন করার অনেক জলন্ত উদাহরন আজো সমাজে   ঘটে যাচ্ছে।থানার কোন্ অফিসারের আচরন কেমন এটার উপরই নির্ভর করছে পুলিশের গ্রহনযোগ্যতা।সাধারন নাগরিকদের কাছে যার গ্রহনযোগ্যতা যত বেশী তার জন্য গ্রামীন সমাজে সেবার পরিধি ছড়িয়ে দেয়াটা অনেকাংশেই সহজ।     আজকের পরিসরটা কাউকে ছোট বা বড় করার জন্য নয়।আচরন নামক  বিশেষনটা  মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।ভালো এবং খারাপ আচরন দিয়েই পারিবারিক ঐতিহ্য ও ভদ্রতার পরিচয় ফুটে উঠে।এই বিষয়টা নিয়ে কিছু লিখতে গেলে আমার দেখা পুলিশ অফিসারদের মধ্যে ফুলপুর থানার এসআই(নিঃ)সুমন মিয়ার কথা না বললে তার প্রতি কার্পণ্যতা দেখানো হবে।আমি অবশ্য ব্যক্তি জীবনে এতটা কার্পণ্যতা কখনোই দেখানোর চেষ্টা করিনা।এসআই সুমনের সাথে আমার পথচলা অনেক দিনের।তার পুলিশী অভিজ্ঞতা খুব বেশী দিনের নয়।এই অল্প সময়ে ফুলপুরের সকল শ্রেনী পেশার মানুষের কাছে “সুমন ভাই”নামে পরিচিতি পেয়েছেন। তার সাথে আমার অনেক সুখ দুঃখের স্মৃতি জড়িয়ে আছে।ফুলপুরের দশটি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল হতে একজন সম্মানিত নাগরিক থানায় এসেছেন আর এসআই সুমনের ভূবন ভুলানো হাসির আতিথিয়েতায় মুগ্ধ হননি এমন ব্যতিক্রমী ঘটনা ফুলপুরবাসীর জীবনে প্রথম দ্বিতীয় কোনটিই নেই। মূহুর্তের মধ্যেই সকলকে আপন করে নেয়ার এক ঐশ্বরিক শক্তির অধিকারী তিনি।পুলিশ বিভাগের প্রতিটি অঙ্গনে একজন করে এসআই সুমন বড়ই প্রয়োজন।     ওপার বাংলার প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী মান্না দে’র  অমর অবিনাশী গান”মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারেনা।”এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নিজেকে অন্যের সেবায় বিলিয়ে দেয়ার পুলিশ সদস্যের সংখ্যা পুলিশ বিভাগে কতজন হবে এটা আমার অজানা।তবে এই প্রতিপাদ্যের আলোকে অকপটে বলতেই পারি এসআই সুমন এক ও অনন্য।        ফুলপুর থানাধীন ৫নং ফুলপুর ইউনিয়নের কাজিয়াকান্দা সাকীনের ৭০ বছর বয়সী ভুক্তভোগী জনাব রমজান আলী পিতামৃত ওমেদ আলী গ্রাম্য সহজ সরল খেটে খাওয়া একজন সাধারন কৃষক।ধনেজনে শক্তিশালী না হওয়ায় সকলের কাছেই অবহেলিত লাঞ্চনা ও বঞ্চনার শিকার।রমজান আলীর সাথে তার আপন জ্যাঠাতো ভাইয়ের মধ্যে জমি নিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ মামলা মোকদ্দমাসহ সামাজিক ও পারিবারিক অসন্তোষ চলিয়া আসিতেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সকলেই আপোষ মীমাংসার চেষ্টা করিয়া ব্যর্থ হইয়াছেন।তার জ্যাঠাতো ভাইয়ের পেশীশক্তি ও সামাজিক প্রতিপত্তির কাছে সকলেই অসহায়ত্ব মেনে নিয়েছেন।ভুক্তভোগী উপায়ান্তর না দেখে নিজের বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারের জন্য ফুলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মহোদয়ের কাছে এসে নিজের উপর চলতে থাকা অবিচার ও অসহায়ত্বের বর্ননা দেন।অফিসার ইনচার্জ মহোদয় নিজের শত ব্যস্ততা ভূলে বয়োবৃদ্ধ মানুষটির কথা শুনে এসআই সুমনকে বিষয়টি সমাধানের জন্য দায়িত্ব দেন।এসআই সুমন বয়োবৃদ্ধ মানুষটির কথা শুনে এবং দলিল দস্তাবেজ চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দুই পক্ষকে নিয়ে থানা হলরুমে দরবারে বসেন।উভয় পক্ষের বিজ্ঞ দরবারীগনের ক্ষুরধার প্রশ্নে উভয় পক্ষ যখন যৌক্তিক উত্তর দিতে ব্যস্ত তখনই এসআই সুমন মুখ খোলেন।এসআই সুমনের গ্রহনযোগ্য এবং যৌক্তিক প্রশ্নবানে বিবাদী পক্ষ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।দেশের একজন প্রবীন নাগরিকের বেদখল হওয়া জমি বিনা শর্তে ফেরত দেন এবং সকলের কাছে নতি স্বীকার করেন।বয়োবৃদ্ধ লোকটি দীর্ঘদিন পরে হলেও তার বেদখল হওয়া জমি ফিরে পাওয়ায় হাউমাউ করে কেঁদে  উঠেন।চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে।একপর্যায়ে পুরো হলরুমে পিনপতন নীরবতার আবহ তৈরী হয়।ভুক্তভোগী মানুষই জানে জবর দখল হওয়া জমি ফিরে পাওয়ার আনন্দাশ্রু ঝরার অনুভূতির কথা।সেদিনের সেই দৃশ্যপটটা একটু অসাবধানতার কারনে ফটোবন্দি করে না রাখাটা অনেক বড় মাপের ভূল হয়ে গেছে।তবুও চোখ যে মনের কথা বলে।সেদিনের সেই আনন্দাশ্রু হয়তো দেশ জাতির ইতিহাসের পাতায় হয়তো কোথাও লেখা থাকবেনা।তবে জনবান্ধব মানবিক পুলিশিং এর পরতে পরতে আমৃত্যু মাইল ফলক হয়ে থাকবে।মনের অজান্তে অতি আনন্দে চোখ দিয়ে ঝরে পড়া অশ্রু আর দোয়া পুলিশ বিভাগকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বহুদুর আর এর সন্মুখভাগে থেকে এসআই সুমনরা যুগ যুগ ধরে নেতৃত্ব দিয়ে যাবে।        পুরো ঘটনাটি খুব বড় না হলেও অসাধারণ এবং ব্যতিক্রমী অনন্য উদাহরন।ইং ০৪/০৪/২০২৪ তারিখ রাত  অনুমান ০৮:০৫ ঘটিকার দিকে এসআই সুমনের অফিস কক্ষে সাদা বাজারের ব্যাগ হাতে একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ এসেই হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দাপ্তরিক নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করেই এসআই সুমনকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।আমি কাকতালীয়ভাবে সেখানে উপস্থিত থাকার সুবাদে অবাক হয়ে গেলাম।গ্রামের একজন সহজ সরল কৃষক থানায় এসেই স্মার্ট,সুদর্শন,চৌকস,জনবান্ধব,মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এসআই সুমনকে কি কারনে  জড়িয়ে ধরলেন এটা জানার জন্য চেষ্টা করলাম।এতটুকুতেই ঘটনার শেষ নয়।পৃথিবীর প্রত্যেকটি কর্মের পিছনে কিছু প্রাপ্তির হিসেব নিকেশ থাকে।আজকের দৃশ্যপটটাও এর বাইরের নয়।কথা বলতে বলতেই লোকটি উপস্থিত সবাইকে ঈদের দাওয়াত দিলেন।কথা শেষ হওয়ার আগেই বয়োবৃদ্ধ মানুষটি হাতে থাকা সাদা ব্যাগটি থেকে একটি কচি ঢাব বের করে বলতে লাগলেন-“বাবা,তুমি আমার নাহাল গরীবরারে  যে খেদমত আর উপকার করলা তোমরারে দেওয়ার মত আমরার সাধ্য নাই।বাড়ীত তোমার চাচীর হাতে লাগাইন্যা এডা ঢাব গাছ আছে।হেই ঢাব গাছে এইবারই পয়লা একটা ঢাব অইছে।তোমার চাচীর ইচ্ছা এই ঢাবডা তুমি খাইবা।আমি দোয়া করি তুমি খুব তাড়াতাড়ি সিআই সাব অইবা।”এক অভাবনীয় দৃশ্য আর কথোপকথন। নিজেকে আর সংবরন করতে না পেরে সহকর্মী পুলিশ সদস্য ছোট ভাই সোহেলকে দিয়ে ঢাব প্রদানের দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করে নিলাম।মানুষের চাহিদা এবং পুরস্কার সাধ এবং সামর্থ্যের মানদণ্ডে ক্ষেত্র ভেদে ভিন্ন রকমের  হতে  পারে।প্রকৃতপক্ষে  আজকের হৃদয় নিংড়ানো পুরস্কারের গল্পটা ব্যতিক্রমী অনন্য উদাহরণ। যা পুলিশ বাহিনীর মানবিক পুলিশিং ধারনাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বহুদূর। এসআই সুমনরা ভুক্তভোগী মানুষদের দোয়া আর ভালোবাসার আকাশ জুড়ে বিচরন করবে আমৃত্যু। এমন স্মৃতির প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী আর কোনদিন হতে পারবোনা কিনা জানিনা।তবে এসআই সুমন ও পুলিশ বাহিনীর জন্য দোয়া ও ভালোবাসা রয়ে যাবে আজীবন।পরিশেষে প্রত্যাশা থাকবে এরকম এসআই সুমন পুলিশ বাহিনীতে একজন হলে চলবেনা।প্রত্যেক পুলিশ সদস্যই এসআই সুমনের চেতনা ও মানবিকতাকে ধারন করে মানবিক পুলিশিং শ্লোগানটিকে বাস্তবায়নের ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাবে বহুদূর।লেখকঃএএসআই(নিঃ),মোঃ সহিদুল ইসলাম,ফুলপুর থানা,ময়মনসিংহ। তিনিও খুব ভালো মনের মানুষ আমি মোঃ কামরুল ইসলাম খান উভয়ের জন্য শুভকামনা নিরন্তর আর কিছু বলার নেই আল্লাহ হাফেজ।