হোসেনপুরে ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দায় পানির প্রবাহ না থাকায় অস্তিত্ব সংকটে স্রোতহীন মরা খাল

21

মো সোহেল মিয়া, হোসেনপুর  (কিশোরগঞ্জ):

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদের ভয়াবহ নাব্যতা সস্কটে পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি আবাদে নেমে এসেছে স্থবিরতা। নদ দু’টির তলদেশে পানির প্রবাহ না থাকায় সেচ নির্ভর কৃষকরা রোরো মওসুমসহ বিভিন্ন সময়ে ক্ষেতে সেচ দিতে পারেনা। তাই এক কালের উত্তাল ব্রম্মপুত্র ও নরসুন্দা নদ আজ স্মৃতীর গহিনে হারিয়ে যাচ্ছে। যদিও বেশ কয়েক বছর আগে ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদের বেশিরভাগ অংশ খনন করলেও বর্তমানে পানি প্রবাহ না থাকায় অস্তিত্ব ও নাব্যতা সংকটে এখন স্রোতহীন মরা খালে পরিনত হয়েছে। তাই ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদের দু-পারের মানুষের প্রানের দাবি অতিদ্রুত নদ দু’টি  পুণ:খনন করে পানির প্রবাহ পুর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহন করা।সরেজমিনে হোসেনপুর-গফরগাঁও সড়কের খুরশিদ মহল সেতু সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,  ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশে পলি জমে এর নাব্যতা হ্রাস পেয়ে এক কালের উত্তাল নদটি ছন্দ হারিয়ে আজ মরা খালে পরিনত হয়েছে। নাব্যতা সংকটে হোসেনপুর,গফরগাঁও, ময়মনসিংহ ও জমালপুর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের পানির প্রবাহ না থাকায় এর অস্তিত্ব এখন প্রায় বিলীনের পথে। পানির প্রবাহ না থাকায় বিভিন্ন এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশে চলছে চাষাবাদ। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্রসহ মৎস্য সম্পদ ও নানা জলজ প্রাণী। নদী তীরবর্তী জেলে পরিবারগুলো এ পেশা ছেড়ে বেকারত্ব ঘোচাতে বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। খেয়া পারের মাঝিরা বৈঠা ছেড়ে কলের নৌকা চলিয়েও শেষাবধি ছাড়তে হয়েছে বাপ-দাদার চিরাচরিত দীর্ঘদিনের আদি পেশা।  জালের মত ছড়িয়ে থাকা শাখা নদী গুলোও এখন বিত্তবানদের ফসলি জমিতে পরিনত হয়েছে। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল দখল নিতে প্রতি শুষ্ক মৌসুমেই মারামারিতে প্রাণহানি ঘটে থাকে। ফলে ব্রহ্মপুত্রের খাস জমি ও বালু ব্যাবসার আদিপত্যকে কেন্দ্র করে নদী তীরবর্তী এলাকায় সামাজিক অসন্তোষ  বেড়েইে চলছে। অপরদিকে হোসেনপুর উপজেলার চর জামাইল থেকে চর-পুমদি এলাকায় গিয়ে দেখাযায়,বিগত দিনে নরসুন্দা নদ যথাযথ ভাবে খনন না করার কারণে ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে সংযোগ রক্ষা না করায় নরসন্ধা নদে পানির প্রবাহ নেই বরং কচুরিপানায় ভরা। ফলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে নরসুন্দা নদ খনন করা হয়েছিলো তা ভেস্তে গেছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। রামপুর বাজার সংলগ্ন নরসুন্দা পাড়ের ব্যবসায়ী সঞ্জীত চন্দ্র শীলসহ অনেকেই জানান, এক সময় এ নরসুন্দ নদ দিয়ে আশুগঞ্জ,ভৈরব ও সুনামগঞ্জ থেকে বড় বড় নৌকা ও কার্গো মালামাল নিয়ে শ্রীপুরের মাওনা ও বরমী বাজার পর্যন্ত চলাচল করতো। কিন্তু বর্তমানে এ নদ নাব্যতা হারিয়ে ফসলি জমিতে পরিনত হয়েছে।অপর দিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে খুরশিদ মহল গ্রামের মোঃ ওয়াদুদ মিয়াসহ অনেকেই জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা সস্কটে পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি আবাদে নেমে এসেছে স্থবিরতা।ব্রহ্মপুত্রের দু’ধারের কৃষি জমি গুলোতে প্রতি মৌসুমে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে না পেরে কৃষকেরা চলতি মওসুমে বোরো আবাদ নিয়ে পড়েছেন দুচিন্তায়। তাছাড়া প্রতি বছরই ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধে কোনো কার্যকরী ও টেকসই ব্যবস্থা না নেয়া নেয়ায় বর্ষা মৌসুমে নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম,বিস্থীর্ণ ফসলী জমি,স্কুল মাদ্রাসা। এসব এলাকার মানুষের অভিয়োগ, বারবার প্রশাসনের কাছে অবেদন-নিবেদন করলেও অদ্যবধি নেওয়া হয়নি কোন কার্যকরি উদ্যোগ। ভয়াবহ নাব্যতা সংকটের কারনে শুকনো মৌসুমে সাধারন নৌকাগুলোও চলতে সমস্যায় পড়তে হয়। ফলে নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় ব্যবসা বানিজ্যেতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রাকৃতিক জল বৈচিত্র ধংস হয়ে যাওয়ায় প্রণীকুলের ভারসাম্যও হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। জনশ্রুতি রয়েছে,তৎকালিন বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ওই ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়েই নৌ বহর নিয়ে হোসেনপুর এলাকা দিয়ে যাতায়ত করতেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নৌ বহরও ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে নিয়মিত টহল ও রসদ সরবরাহের নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহার করতেন। হোসেনপুরে তারা নীলকুঠিও স্থাপনও করেছিলেন। এসব সমৃদ্ধ ইতিহাস আজ কেবল স্মৃতি,নাব্যতা সস্কটে ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদ আজ বিপন্ন। তাই এসব নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের প্রানের দাবী ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদ সরকারী উদ্যেগে পূণ:খনন করে নাব্যতা আগের মতো ফিরিয়ে আনা। আর তাতেই সুফল পাবে কৃষকসহ সংশ্লিষ্টরা।