দেশীয় ফল গোলাপজাম

23

লেখা ও ছবি : নূর আলম গন্ধী:
গোলাপজাম আমাদের দেশীয় ফল। স্বাদ-গন্ধ ও পুষ্টিগুণে অতুলনীয়। গোলাপের সুগন্ধযুক্ত এ ফলটিকে ইংরেজিতে বলা হয় জড়ংব ধঢ়ঢ়ষব। দেশের সর্বত্রই কম বেশি জন্মে। তবে বেশি জন্মে সিলেট, মৌলভীবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও রাজশাহী এলাকায়। আমার দেখা মতে একটা সময় বনে-জঙ্গলে, প্রামীণ রাস্তার ধারে, পুকুর পাড়ে, পতিত স্থানে এবং বসতবাড়ির আঙ্গিনায় গোলাপজামের গাছ চোখে পড়তো বেশ। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কোন কোন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে খুবই কম পরিমাণ চোখে পড়ছে। এর মূল কারণ অগ্যতা, গাছের প্রতি অনাদর ও অবহেলা এবং নতুন করে এর চারা গাছ রোপণ না করা। আর এর থেকে বলা চলে গোলাপজাম যেনো হারিয়ে যেতে বসেছে। গ্রামে বেড়ে ওঠার সুবাদে শৈশবে আমি সুস্বাদু এ গোলাপজাম ফলের গাছে উঠে নিজ হাতে কত কত ফল পেড়ে খেয়েছি তা বলে বুঝানো যাবে না, গোলাপজাম লিখতে বসে মধুময় স্মৃতিগুলো চোখে ভাসছে। তখনকার সময়টায় আমাদের গ্রামের আশেপাশে বেশ অনেকগুলো গোলাপজামের গাছ ছিল। যাক, আশার বাণী- দেশের কিছু কিছু নার্সারিতে সাম্প্রতিক সময়ে কম পরিমাণে হলেও গোলাপজামের চারা পাওয়া যাচ্ছে, তাছাড়া অনেকেই ছাদ বাগানের টবে গোলাপজাম গাছ রোপণ করছেন এবং তা সম্প্রসারিত হচ্ছে। গোলাপজাম মাঝারি আকারের চিরসবুজ বৃক্ষ। এর পরিবার গুৎঃধপবধব, উদ্ভিতাত্ত্বিক নাম ঝুুুমরঁস লধসনড়ং। আদিনিবাস ভারত ও মালয়েশিয়া। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামে রয়েছে এর বিস্তৃতি। গাছ উচ্চতায় সাধারণত ২০-২৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। গাছের কাঠ বেশ কাঠ শক্ত-মজবুত, বাকল মসৃণ, রঙে ধূসর। গাছের শাখা-প্রশাখা অনেকটাই ছড়ানো। ঘন পাতা ও শাখা-প্রশাখার বিন্যাসে এক কথায় আকর্ষণীয় গাছ। পাতা রঙে গাঢ় সবুজ, আকারে লম্বাটে, মধ্য শিরা স্পষ্ট, অগ্রভাগ সূচালো, লম্বায় প্রায় ১৮-২০ সেন্টিমিটার এবং চওড়ায় প্রায় ৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ফুল ফোটার মৌসুম ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস। গাছের শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে গুচ্ছাকারে ফুল-ফল ধরে। ফুল হালকা সুগন্ধযুক্ত, রঙে সাদা, তাছাড়া ফুলে সবুজাব-সাদা রঙের ছোট পাপড়ি ৪টি, থাকে অসংখ্য লম্বা পরাগ কেশর ও গর্ভদ- । ফুলের গঠন, রং, পরিস্ফুটন বিন্যাস সব মিলে ফুটন্ত ফুল খুবই নজরকাড়া। ফল পাকার মৌসুম মে-জুন মাস। ফল প্রায় গোলাকার, কাঁচা ফল রঙে সবুজ, পাকা ফল রঙে ধবধবে সাদা থেকে ফিকে হলুদ বা হালকা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। পাকা ফল বেশ আকর্ষণীয়, স্বাদে মিষ্টি, গোলাপের ঘ্রাণ মিশ্রিত এবং খুবই মজাদার। শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে গুচ্ছাকারে ৪-৫ টি বা তার অধিক ফলও ধরতে দেখা যায়। প্রতি ফলে থাকে একটি বা দুটি বীজ, বীজ আকারে গোলাকার, রঙে কালচে খয়েরি। বীজ ও গুটি কলমের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা সম্ভব। কলম চারার গাছে কম সময়ের মাঝে গাছে ফল ধরে এবং বীজ থেকে উৎপাদিত চারার গাছে উপযুক্ত পরিবেশে ৪-৫ বছরের মাঝে গাছে ফল ধরে। রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশ, পানি নিকাশমুক্ত উঁচু ভূমি ও প্রায় সব ধরনের মাটিতে গোলাপজাম জন্মে।
গোলাপজাম ফলে বিদ্যমান রয়েছে নানাবিধ পুষ্টি উপাদান এবং রয়েছে এর নানাবিধ উপকারী দিকও। ফলে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের মাঝে- খাদ্যশক্তি, আমিষ, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২ ও ভিটামিন-সি উল্লেখযোগ্য। উপকারিতা বিবেচনায় গোলাপজাম- পেটের পীড়া, ডায়েরিয়া ও বমিভাব দূর করে, তৃষ্ণা নিবারণ করে, মুখের রুচি বৃদ্ধি করে। তাছাড়া গাছের পাতা ও বাকল ডায়াবেটিস রোগের জন্য উপকারী।
গোলাপজাম ফলের ছবিটি ক্যামেরাবন্দি করি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের ভিটাদিয়া গ্রামের আবুবাক্কার মিয়ার বসতবাড়ির পুকুরপাড় হতে।