শ্রীবরদীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা

247

মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, শেরপুর জেলা প্রতিনিধি : শেরপুরের শ্রীবরদীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ফসলি জমিতে অবাধে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের খোশালপুর গ্রামে এক কিলোমিটারের মধ্যে ৫টি ইটভাটা রয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের পরও ভাটার কার্যক্রম থেমে নেই রহস্যজনক কারণে। শেরপুর জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শ্রীবরদী উপজেলায় ১৩টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ১টি ইটভাটার অনুমোদন রয়েছে। প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা আইন অমান্য করে ফসলি জমি লোকালয়, পৌরসভার সীমান্তে বিদ্যালয়ের কাছে নিষিদ্ধ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করছেন। আবার অনেক ইটভাটার মালিকরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে যথযাথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও অনেক সময় বাঁধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। প্রশাসনের গুটি কয় অসাদু কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও যেন দেখার কেউ নেই। ইট পুড়ানোর কার্যক্রম চলছে দেদারছে। উপজেলার খোশালপুর গ্রামে গত ২ বছরে এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বাংলা ব্রিকস্, জনতা জিগজাগ ব্রিকস্, মনিরা অটো ব্রিকস্, একতা ব্রিকস্ ও এনএসবি অটো ব্রিকস্ গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি দেখা যায়, ভাটাগুলো শর্ষে ও ভুট্টা সহ ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। বাংলা ব্রিকস্ এর ৭০০ মিটারের মধ্যে খোশালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অন্য ভাটাগুলোর আশপাশে চককাউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ৩টি বিদ্যালয় রয়েছে। রয়েছে জনবসতি ও দোকানপাট। ভাটা গুলোয় ইট প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে ও ইট পুড়ানো হচেছ। ভাটার চিমনি দিয়ে কালো ধোয়া নির্গত হচ্ছে। এনএসবি ব্রিকস্ এর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। খোশালপুর মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফেরদৌসুর রহমান বলেন, এখানে ৫টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এজন্য এলাকার পরিবেশের অনেক ক্ষতি হচেছ। গাছপালায় ফলমুল ধরছে না। আবার কোন গাছে ফল ধরলে সেগুলো গাছ থেকে ঝড়ে যায়। ফসলি জমিতে পর্যাপ্ত ফসল উৎপন্ন হচ্ছে না। কোন কোন ক্ষেতের ফসল মরে যাচ্ছে । আবার কোন কোন ক্ষেতের ফসল বড় হতে পারছে না। কালো ধোয়ায় আশে পাশের বিদ্যালয় গুলোয় ছেলেমেয়েদের পড়ালেখায় ও এলাকাবাসীর বসবাসে ক্ষতি হচ্ছে। জনতা অটো ব্রিকস্ সংলগ্ন ফসলি জমির মালিক খোশালপুর কানিপাড়া গ্রামের লাল মিয়া বলেন, ফসলি জমিতে ভাটা করায় ফসল কম হইতাছে। গাছপালায় ক্ষতি হইতাছে। ফসল ধরতাছে না। বাড়ি ঘরের রং নষ্ট হইয়া যাইতাছে। আমরা এ সমস্ত ভাটা বন্ধ করার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানায়। গত বছরের ২৮ শে নভেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের এক গনবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশজুড়ে অবৈধ ইটভাটায় ইট পুড়ানোর ফলে ব্যাপক বায়ো দুষন হয়। এ কার্যক্রমে জমির মাটি ব্যবহারের ফলে একদিকে কৃষি উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে অন্যদিকে বায়ো দুষনের কারণে জনস্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শীত মৌসুমে ইটভাটা সমূহের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বায়ু দুষনের মাত্রা অনেক বৃদ্ধি পায়। বায়ু দুষণ হ্রাস ও ইট প্রস্তুত কার্যক্রমকে পরিবেশ সম্মত ভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে সরকার ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপক/নিয়ন্ত্রণ আইন/২০১৩ (সংশোধিত-২০১৯) জারি কার্যকর করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আইন অমান্যকারী ইট ভাটা মালিকদের অবৈধ ভাবে ইট ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ শে জানুয়ারী মনিরা অটো ব্রিকস্ কে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালত। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, বাংলা ব্রিকস্ এর মালিক এরশাদুল আজিম বলেন, ইট প্রস্তুত ও পুড়ানোর বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও প্রশাসনের কোন অনুমতি পত্র তার নেই। তবে ছাড়পত্রের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন। একই কথা জানান, জনতা জিগজাগ ব্রিকস্ এর মালিক আজফাকুর রহমান। মনিরা অটো ব্রিকস্ এর মালিক ও বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ফখরুজ্জামান মতিন ও জনতা ব্রিকস্ এর মালিক আরমান তালুকদার। এদিকে শ্রীবরদী পৌরসভার সীমান্ত ঘেষা জালকাটা (ষাইটকাকড়া) এলাকায় রয়েছে রাজু ব্রিকস্ । ভাটাটির কাছেই ষাইটকাকড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দক্ষিণ ষাইটকাকড়া কমিউনিটি ও জালকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, ফসলি জমি, লোকালয়, ফসল ও বনজ বৃক্ষ এবং আবাসিক এলাকা রয়েছে। দুই বছর ভাটাটি নির্মাণকালে সেটি বন্ধের জন্য এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে জানালেও কোন ফল হয়নি। অবৈধ ভাবে সেখানে ইট প্রস্তুত ও পুড়ানো অব্যাহত রয়েছে। গত ১৯ শে জানুয়ারী ভ্রাম্যমান আদালত ৫০ হাজার টাকার জরিমানা করেন। এছাড়া প্রশাসনের অনুমতি ও পরিবেশ অধিপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই সম্প্রতি উপজেলার তেজারকান্দি এলাকায় জেডিএস ব্রিকস্, ঝগড়ারচর বারার চর এলাকায় এমএসবি ব্রিকস্ ও খড়িয়াকাজিরচর এলাকায় মদিনা ব্রিকস্ নামে আরো ৩টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর, শেরপুরের সহকারি পরিচালক রাসেল নোমান বলেন, শ্রীবরদীতে অবৈধ ইটভাটাগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অবৈধ ভাবে কোন ইটভাটা যাতে কার্যক্রম চালাতে না পারে সেজন্য অধিপ্তরের সর্বাত্মক প্রবেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।