ঠাকুরগাঁওয়ে জঙ্গলে পরিণত রানীশংকৈল রাজা টঙ্কনাথের বাড়ি

241

মোঃ মজিবর রহমান শেখ ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি: জঙ্গলে পরিণত রানীশংকৈল রাজা টঙ্কনাথের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে রানীশংকৈল উপজেলা। এই উপজেলার পূর্ব প্রান্তে কুলিক নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত ১০৩ বছরের মালদুয়ার জমিদার রাজা টঙ্কনাথের রাজবাড়ি। হচ্ছেনা কোন সংস্কার যা ফলে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে এটি। দীর্ঘদিন যাবত পরিত্যক্ত হয়ে আছে এই রাজবাড়িটি। দেয়ালের প্রতিটি অংশ বর্তমানে ধ্বংশের পথে। কম বেশি সব খানেই গাছের পাতা উঠেছে। জঙ্গলে পরণিত হয়েছে রাজবাড়িটি। এর পরেও কমেনি সাধারণ জনগনের কাছে তার কদর। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে এখনো আসছে এটি দেখতে। সারেজমিনে গেলে এমনি চিত্র চোখে পড়ে। দেখতে এসেছে অনেকেই। রাজা টঙ্কনাথের ইতিহাস, রাজবাড়িটির ভবন সংস্কার ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। জানা যায়, রাজা টংকনাথের পিতা বুদ্ধিনাথ ছিলেন মৈথিলি ব্রাহ্মণ। রাণীশংকৈল থেকে ৭ কিলোমিটার পূর্বে কাতিহার শ্যামরাই মন্দিরের সেবাইত ছিলেন বুদ্ধিনাথ। উক্ত মন্দিরটির মালিক ছিলেন ঘোষ বা গোয়ালা বংশীয় নি:সন্তান এক জমিদার। বৃদ্ধ গোয়ালা জমিদার কাশিবাসে যাওয়ার সময় সমস্ত জমিদারি সেবায়েতের তত্ত্বাবধানে রেখে যান এবং দলিল করে যান যে, তিনি কাশি থেকে ফিরে না এলে সেবাইত বুদ্ধিনাথ জমিদারির মালিক হবেন। পরে জমিদার ফিরে না আসলে বুদ্ধিনাথ জমিদারির মালিক হয়ে যান। তবে অনেকে মনে করেনম, এ ঘটনাটি বুদ্ধিনাথের দু-এক পুরুষ পূর্বেরও হতে পারে। মতান্তরে আঠার শত খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে মালদুয়ারের নাম ছিল রামগঞ্জ। সে সময় এলাকার জমিদারি ছিল দুই সহোদরের হাতে।নাথপন্থী এই সহোদর যুগল ছিলেন চিরকুমারী। তারা পরিচিত ছিলেন বড় রাণী ও ছোট রাণী হিসেবে। উভয় রাণী কাশীধামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তামার পাতে জমিদারি বুদ্ধিনাথের নামে লিখে দেন। কথা ছিল তারা ফিরে না আসলে জমিদারি সেবায়েতের হয়ে যাবে। রাণীরা আর ফিরে আসলেন না। রাজবাড়ি নির্মাণের কাজ বুদ্ধিনাথ শুরু করলেও সমাপ্ত করেন রাজা টংকনাথ রায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে রাজবাড়ীটি নির্মিত হয়। বুদ্ধিনাথের তিন ছেলে রাম নাথ, টংকনাথ ও গৌরাঙ্গ নাথ। রাম নাথের অকাল মৃত্যু হয় গৌরাঙ্গ ছিল হাবা গোবা। টংকনাথ ছিল চতুর। বুদ্ধিনাথের মৃত্যু হলে টংকনাথ সমস্ত জমিদারি হাতিয়ে নেন। ঊনবিংশ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে এই জনপদটি ছিল মালদুয়ার পরগনার অন্তর্গত। পরে টংকনাথ ব্রিটিশ সরকারের আস্থা লাভ করে মালদুয়ার স্টেট গঠন করেন। কথিত আছে, টাকার নোট পুরিয়ে জনৈক ব্রিটিশ রাজ কর্মচারীকে চা বানিয়ে খাইয়ে টংকনাথ চৌধুরী উপাধি লাভ করেন। এর পর দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজা নাথ রায়ের বশ্যতা স্বীকার করে রাজা উপাধি পান। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের শাসন থেকে মুক্ত হলে রাজা টঙ্কনাথ চৌধুরী ১৭ আগস্ট স্বপরিবারে ভারতে চলে যান। বিশাল রাজবাড়ী জীর্ণশীর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমান রাজবাড়ীটির অনেক অংশই নষ্ট ও ধ্বংস হয়ে গেছে। চারপাশে ছিন্নমূল মানুষের বসবাস। যে কোন মুহূর্তে রাজবাড়ীটি ভেঙে পড়তে পারে সংস্কার না হওয়ায়। চুরি হয়ে যাচ্ছে ইটসহ দামী সৌখিন দরজা, জানালা ও লোহার বিভিন্ন জিনিসগুলো। স্থানীয়রা জানান, এই রাজবাড়িটি আমাদের এলাকার একটি ঐতিহ্য। এটি দীর্ঘদিন ধরেই পড়ে আছে। এটা দেখতে অনেকেই আসেন প্রতিদিন। যদি এটাকে মেরামত করা হয় তাহলে আবারো আমাদের ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ীটি সকলের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। রাজবাড়ি দেখতে আসা মনি রুপা আশরাফ সহ তাদের দলের অনেকেই বলেন,বন্ধুরা মিলে এসেছি এই রাজবাড়িটি দেখতে। অনেকের মুখেই শুনেছিলাম এটার কথা। বাড়িটি অনেক সুন্দর কিন্তু দেখতে ভয় লাগছে। কারন এটা পুরোটাই একটা জঙ্গলের মতো হয়ে গেছে। এটাকে সংষ্কার করা হলে অনেক ভালো হবে। রাজা টঙ্কনাথের স্মৃতি বিজড়িত কীর্তিকে অমর করে রাখার জন্য আজ বড় প্রয়োজন এই রাজবাড়ীটির সংস্কার ও সংরক্ষন। সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে ইতিহাস, ঐতিহ্যকে ধরে রাখার প্রবল প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেন রাণীশংকৈলবাসী। এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড.কে.এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন,রাজবাড়িটি দীর্ঘদিন আগের। ইতিমধ্যে আমি এটি পরিদর্শন করেছি। আমরা চেষ্টা করবো এটি সংস্কার করে ঐতিহ্যতাকে ফিরেয়ে আনার।