দৃশ্যপটে বাংলাদেশ পুলিশ ও জনপ্রত্যাশা

286

এ.কে.এম শামছুল হক রেনু,লেখক কলামিষ্ট : বাংলাদেশ পুলিশ আমাদের গর্ব ও অহংকার। তবে পুলিশের কিছু লোকের অন্যায় অসদাচারণ, অপরিনামদর্শীতা ও ঘুষ দুর্নীতির কারণে পুলিশের সুনাম, গর্ব ও অহংকার যথেষ্ট সমালোচিত। মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদানকে খাটো করে দেখার সুযোগ একেবারেই পরাহত। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে বর্বর হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত অবস্থায় ট্যাংকের গুলি চালিয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশ ও তাদের স্ত্রী, পুত্র, পরিজনকে নির্মম, নিষ্ঠুর, দানবীয় ও নৃশংসভাবে হত্যা করে থাকে। যারা লাশের স্তুপে মৃত্যুর জ্বালায় কাতরাতে ছিল তাদেরকেও ত্রিনট ত্রি রাইফেলের গুলি ও বেয়নেট চালিয়ে হত্যা করা হয়ে থাকে। তারপরও ডিউটিতে থাকা পুলিশ সদস্যরা নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের মাটি আজও পুলিশ ও তাদের পরিবার পরিজনদের রক্তে আচ্ছাদিত। যে দুঃখ ও বেদনার শেষ নেই। এমনিভাবে ইপিআর (বিজিবি), সেনাবাহিনী, আনসার ও অন্যান্যদের অবদানকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। ঘুষ দুর্নীতির সাথে পুলিশকে জড়ানো হলেও আজ বেসামাল ঘুষ দুর্নীতির প্রেক্ষাপটে পুলিশের দুর্নামকে ম্লান করে অন্যদিকে ধাবিত হচ্ছে। যেখানে প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অন্যান্য বিভাগ ও সংস্থার শত শত, হাজার হাজার কোটি টাকার সীমাহীন ঘুষ, দুর্নীতি চোখে পড়ে থাকে। যে উদাহরণের শেষ নেই। পুলিশ বিভাগসহ অন্যান্য পর্ষদে নিষ্ঠাবান, আদর্শবান, ন্যায় পরায়ন, ঘুষ দুর্নীতি মুক্ত জনবান্ধব হিসেবে অগনিত ব্যক্তি রয়েছে। তাদের আচরণ দেখে এমনিতেই তাদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধার কমতি থাকে না। কিন্তু কিছু লোক চেয়ারে বসে নিজেকে রাজা, মহারাজা মনে করে থাকে। এদের কোনো আদর্শ নেই, দর্শন নেই। জনগণের ঘামের অর্থে তাদের বেতন আসে তাহাও ভুলে যায়। ওরা মানুষকে সম্মান দিতে জানেনা। জানা যায়, অনেক সময় অনেকেরই পিএস, এপিএস, পিএ, স্টাফ অফিসারের দায়িত্বে থাকা কিছু ব্যক্তি এমন অশোভন ও অমার্জনীয় ব্যবহার করে থাকে যা কল্পনাতীত। যা অনেক সময় অনেকেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে না জানিয়ে নিজেকে সংবরণ করে থাকে। অথচ সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে উদাসীন ও চোখ, কান খোলা না রাখার কারণে তাদের সুনাম ও ভাবমূর্তিকে যে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে যা ভাবতে গিয়েও অবাক বিষ্ময় ও হিমশিম খেতে হয়। কিছুদিন আগে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি দুঃখ করে বলেছেন, দেশের একজন নামীদামী স্বনামধন্য জনবান্ধব কর্মকর্তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের অভিপ্রায়ে তাহারই স্টাফ অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে সদোত্তর মিলেনি। বরং মনে হয়েছে, এই অধীনস্থ স্টাফ অফিসার অনেক উর্ধ্বে। ১৯৮২ সনের ২৪ মার্চ দেশে সামরিক শাসন জারীর আগে সিরডাব মিলনায়তনে এক সামাজিক অনুষ্ঠানে বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী, মেজর জেনারেল আব্দুর রহমান ও সাংবাদিক আতাউস সামাদ বলেছিলেন দেশের ভালো মানুষগুলো আজ বড় অসহায়। আর কিছু চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও খারাপ লোক মাথার উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। কিছুদিন হয় পুলিশ সদর দফতরের এআইজি মিডিয়া সোহেল রানার সাথে কথা বলেছিলাম। তাতে তিনি যে সুন্দর ব্যবহার করেছিলেন তাতে সত্যিই আনন্দিত ও গর্বিত। যদিও এআইজি মিডিয়াকে আগে আমি চিনি না ও জানি না। প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে

তার সুমধুর আচরণ পারফরমেন্স ফুটে উঠেছে। তার মাঝে অহংকারি ও দাম্ভিকতার ছায়া স্পর্শ করেনি। যা তাকে মহান করেছে। আর যারা মানুষের সাথে যথাযথ আচরণ না করে বেবিচকের ন্যায় কথা বলে ওরা শুধু নিজেকেই ডুবাচ্ছেনা স্বনামধন্য, জনবান্ধব ও প্রশংসিত কর্মকর্তাকেও ডুবাতে বাকি রাখেনি।

কিছুদিন আগে কুঁড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের এনডিসি নাজিম উদ্দিন রাত সাড়ে বারটায় মোবাইল কোর্টের নামে একজন সাংবাদিককে ঘুম থেকে তুলে আনে। সঙ্গীয় লোক নিয়ে পেটায় এবং ক্রসফায়ারে দেয়ার কথা বলে। জামালপুরের সাবেক ডিসি তার বাসায় অফিস কক্ষের পাশে নান্দনিক ও সুশোভিত কক্ষ করে অফিসের সহকারিনীর সাথে যে বেলাল্লাপনা ঘটনা ঘটিয়েছিল তা কারও অজানা নয়। তারও আগে বরখাস্তকৃত একজন পুলিশ কর্মকর্তার ঘটনা টক অব দি কান্ট্রি হিসেবে বিবেচিত। নিবন্ধের প্রারম্ভেই বলছিলাম, পুলিশের ঘুষ দুর্নীতির অপবাদ এখন অনেকাংশ ম্লান হতে চলেছে। কারণ ০২/৯/২০ ইং জাতীয় সংবাদ পত্রের শিরোনামে প্রকাশিত শিরোনাম ছিল, করোনায় মাস্ক ও থার্মোমিটার নিয়ে দুর্নীতি, ৯ কোটি টাকার করোনা ভাইরাস কোভিড- ১৯ সামগ্রী কেনাকাটায় ৮ কোটিই লোপাট। জানা যায়, কোভিড- ১৯ রোধে ৯ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকার মাস্ক ও ইনফ্রারেড থার্মোমিটার কেনায় বড় ধরণের দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে র‌্যাব। কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স এন্ড প্যান্ডেসিক প্রিপিউনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের কেনা কাটায় উপেক্ষা করা হয়েছে। ঔষধ প্রশাসনের এনওসি (ঘড় ড়নলবপঃরড়হ পবৎঃরভরপধঃব) ছাড়াই চীন থেকে চোরাইপথে আনা হয় নি¤œ মানের কোভিড- ১৯ সামগ্রী। যদিও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুর্নীতির সাথে আপোষ নেই। সে যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন। দুর্নীতিবাজ দেশ, জাতি ও জনগণের শত্রু। এমনিভাবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদকেও সোচ্চার হতে দেখা যায়। জানা যায়, কিশোরগঞ্জের জেলা রেজিস্ট্রারের ঘুষ বাণিজ্য থেকে আসে ৩৫ লাখ টাকা। জেলায় মাসে নিবন্ধনকৃত ১০ হাজার দলিল থেকে ২০০ টাকা করে ২০ লাখ, রেকর্ডরুম থেকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে মাসে ৩ লাখ, প্রতিমাসে ৩টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস পরিদর্শন করে ৬ লাখ, প্রতিমাসে কর্মচারীদের বদলী বাণিজ্য করে ৫ লাখ এবং জেলায় খন্ডকালীন দায়িত্বপালনকারী সাবরেজিস্ট্রারের নিকট থেকে সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ বাণিজ্য হচ্ছে (০৩/৯/২০২০ ইং দৈনিক যুগান্তর)। তাছাড়া প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ঘুষ-দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে থাকে। যা কারও না জানার কথা নয়। জানা যায়, পাসপোর্টের আঞ্চলিক অফিসগুলো রীতিমতো ঘুষের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দালালের মাধ্যমে প্রকাশ্যে চলে ঘুষ-বাণিজ্যের কারবার। যা ওপেন সিক্রেট। ৬৯টি আঞ্চলিক অফিস থেকে কর্মকর্তাদের নামে প্রতিমাসে কমবেশী ঘুষ তোলা হয় ১২ কোটি টাকা। বিভিন্ন হারে যার ভাগ যথাসময়ে পৌঁছে যায় প্রধান কার্যালয়ের পদস্থ কর্মকর্তাদের পকেটেও। পিলে চমকানো এ রকম ঘুষ কারবারের তথ্য প্রমাণ বেড়িয়ে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। যেখানে বলা হয় একজন পরিচালক ৩ বছরে মাসোহারা তুলেছে ৬ কোটি টাকা। সাক্ষ্য প্রমাণসহ গোয়েন্দা সংস্থার চাঞ্চল্যকর রির্পোটটি এখন দূর্নীতি দমন কমিশনে (যুগান্তর ০৮/০৯/২০ ইং)। নিবন্ধনে ৩টি উদাহরণ থেকে পুলিশকে এখন ঘুষ, দুর্নীতির ব্যাপারে লাগামহীনভাবে আগের মতো বলার সুযোগ না থাকারই কথা। কক্সবাজারের টেকনাফের বাহার চড়ায় সেনাবাহিনীর চৌকস মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খানকে যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং তদন্তে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ এস.আই লিয়াকত ও অন্যান্যদের সংশ্লিষ্টতা যেভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে তা পুলিশ বাহিনীর জন্য খুবই দুঃখজনক। পুলিশ বাহিনীতে ওসি প্রদীপের মতো কিছু দানব থাকার কারণেই পুলিশের অনেকেরই অর্জন সময় সময় ধুলায় লুন্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে পুলিশ জনগণের নিকট দায়বদ্ধ। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিষ্ঠাতা ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের জনক রবার্ট ফীল বলে গেছেন চড়ষরপব ধৎব ঃযব ঢ়ঁনষরপ ধহফ চঁনষরপ ধৎব ঃযব ঢ়ড়ষরপব অর্থাৎ পুলিশই জনতা এবং জনতাই পুলিশ। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ কিছুদিন আগে মেজর (অব:) সিনহা রাশেদ খানের নিহত হওয়ার সংবাদ পেয়ে কক্সবাজারের টেকনাফের বাহার চড়ায় ছুটে যান এবং সেখানে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে দুঃখ প্রকাশ করে ভরাক্রান্ত মনে বলেছিলেন, পুলিশ বাহিনীতে থেকে অন্যায় করে রেহাই পাবে না কেউ। যদি কারও ভালো না লাগে তবে চাকুরি ছেড়ে চলে যেতে পারেন। কাহাকেও ক্ষমা করা হবে না। বেনজীর আহমেদ একজন নিষ্ঠাবান আইজিপি। তিনি যেখানেই চাকুরী করেছেন অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। দেশের মানুষের কাছে তিনি জনবান্ধব কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তাহার মাঝে হিংসা ও অহংকারের চাপ নেই। তিনি একজন স্পষ্টভাষী হিসেবেও পরিচিত। তাহার কাছে সমাজের সাধারণ মানুষের মর্যাদা অপরিসীম। সার্বিক অর্থে আইজিপি হিসেবে তাহার মতো এমন একজন ব্যক্তির প্রয়োজন ছিল বলে দেশের অনেকেই তা মনে করে থাকে। এছাড়া ডিএমপির কমিশনার ও র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দুর্বীনিতদের বিরদ্ধে যে অভিযান পরিচালনা করেছেন, দেশের মানুষ ও ইতিহাসে তা অমর হয়ে থাকার কথা। দেশের একজন নাগরিক, সাংবাদিক ও নিবন্ধক হিসেবে বলব বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদ কিশোরগঞ্জের এডিশনাল এস.পি ও পরবর্তী সময় জনবান্ধব এস.পি হিসেবে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে যে ভূমিকা রেখে গেছেন তা স্মৃতি হয়ে রয়েছে, যা ভুলে যাওয়ার নয়। বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকের দায়িত্ব, কর্তব্য অপরিসীম। যে কারণে তাঁহার অধঃস্তনদের মানুষের সাথে যথাযথ ব্যবহার করা সমোচিত। তা না হলে আঁচর তার ওপরেই সংগত কারণে চলে আসে। একজন নিবন্ধক হিসেবে সাদামাঠাভাবে বলব, জনবান্ধব আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের আশেপাশে দায়িত্বে থেকে অধঃস্তনরা এমন কিছু করবেন না যাতে নিজের ও স্বনামধন্য জনবান্ধব আইজিপি মহোদয়ের সম্মান ক্ষুন্ন হয়। যদিও আইজিপি মহোদয়ের সম্মান বৃদ্ধিতে অধঃস্তন কর্মকর্তা, কর্মচারীদের দায়িত্ব কোনো অংশে কম নহে।

বাংলাদেশ পুলিশে আরও যেমন প্রদীপ মার্কা ওসি রয়েছে তেমনি অনেক ন্যায় নিষ্ঠাবান, আদর্শবান ও ভালো কর্মকর্তা রয়েছে। আর কারও অনিয়ম, দুর্নীতি, অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারও গোপন থাকেনি। যা বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে যেমন মিডিয়াতে চলে আসে তেমনি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় সময় ভাইরাল হতে দেখা যায়। মেজর (অবঃ) সিনহা রাশেদ খানের নিহত হওয়ার ঘটনায় এস.আই লিয়াকত ও অন্য আরেকজন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ১৬৪ ধারার জবানবন্দী দেখলে যে কারও শরীর শিহড়িয়ে ওঠে। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ ডিএমপির কমিশনার থাকাকালীন প্রভূত সমস্যা ও অচলায়তনকে অতিক্রম করে সমৃদ্ধ হয়েছেন। নারায়নগঞ্জের র‌্যাবের অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় র‌্যবের ভাবমূর্তি যথেষ্ট ক্ষতি হয়। তিনি র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে অক্লান্ত শ্রম, নিষ্ঠা ও দক্ষতায় র‌্যাবকে নতুন করে মানুষের কাছে আস্থায় আনতে সক্ষম হয়ে থাকেন। ক্যাসিনো কেলেংকারীর সাথে সংশ্লিষ্ট গডফাদারদিগকে ধরেছেন, আইনের আওতায় নিলেও অনুঘটক ও নাটের গুরুরা আজও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ বিভাগে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের মতো অগনিত স্বচ্ছ, ন্যায়পরায়ন, নিষ্ঠাবান, আদর্শবান ও জনবান্ধব পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছে। যাদের অবদান, সুনাম ও কৃতিত্বকে ভুলে যাওয়ার নহে। সারদা পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল ও বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাজিবুর রহমান, হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক মল্লিক ফখরুল ইসলাম, ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, অতিরিক্ত ডিআইজি আনোয়ার হোসেন খান, এসপি মাশরুকুর রহমান খালেদ, মোঃ বরকত উল্লাহ খান এস.পি হাইওয়ে পুলিশ, সদর দফতরের এআইজি মিডিয়া সোহেল রানাসহ আরও অগনিত পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখযোগ্য। মল্লিক ফখরুল ইসলাম এসপি হিসেবে কিশোরগঞ্জ থেকে বদলীজনিত কারণে অন্যত্র চলে যাওয়ার সময় অনেকেই রবীঠাকুরের কবিতার পংক্তিতে বলতেছিল যেতে নাহি দিব। একবার আমি একজন সাংবাদিক বন্ধুসহ আরেকজনকে সাথে নিয়ে সারদা পুলিশ একাডেমি দেখতে যাই। তার একদিন পরই নবাগত উপপুলিশ পরিদর্শকদের পাস আউট প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, আইজিপি এ.কে.এম শহীদুল হক। পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল নাজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি আমাদিগকে পুলিশ আউট পাস প্যারেড অনুষ্ঠান দেখার আমন্ত্রণ জানান। তাছাড়া পুলিশ একাডেমি ঘুরে দেখার জন্যে অভূতপূর্ণ সহযোগিতা করে থাকেন। যা কোনো দিন ভুলে যাওয়ার নয়। তিনি এবং তাহার সহকর্মীরা যে সুন্দর ব্যবহার, আপ্যায়ন করেছেন, যে আতিথিয়তা দেখিয়েছিলেন তা মন থেকে ক্ষণিকের জন্য চলে যায়নি। বার বার মনে হয়, আবার যেন সারদা পুলিশ একাডেমি দেখে আসি। মানুষ মানুষের জন্য এ কথাটি চালু থাকলেও প্রায় সময়ই একথাটির প্রতিফলন বাস্তবে দেখা যায় না। এই অবক্ষয়ের সময়ও নাজিবুর রহমানের মতো একজন বড়মাপের পুলিশ কর্মকর্তা, নিরঅহংকার, সাদামাঠা মনের মানুষ ও মানুষের জন্য মানুষ পাওয়া আজ খুবই অভাব। বাংলাদেশ পুলিশের জন্য এই কর্মকর্তার পারফরম্যান্স কত যে উর্ধ্বে নিয়ে গেছে তা কল্পনাও করা যায় না। তারপরও বলব, এ সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তা বাংলাদেশ পুলিশের গর্ব, অহংকার, দেশ, জাতি ও জনগণের আশার আলোক বর্তিকা। সরকারি বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা ও চিহ্নিত কিছু ব্যক্তির কোটি কোটি টাকার বেসামাল দুর্নীতির অপবাদ পুলিশের বিরুদ্ধে না আসলেও প্রদীপ কুমার দাস, লিয়াকতের মতো কিছু কিছু পুলিশ কর্মকর্তার অপরিনামদর্শীতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অসদাচরণ দৃশ্যপটে যথেষ্ট আলোচিত ও সমালোচিত। যা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। পুলিশের এ শ্রেণীটা পুলিশের বিভিন্ন অবদানকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে যা ভাবতেও অনেকেরই হিমশীম ও আচড় খেতে হয়। আজ পুলিশের দীর্ঘদিনের ঘুষ দুর্নীতির অপবাদ, বদনাম অন্যান্য মেগা দুর্নীতির কারণে যেমন ম্লান হতে চলেছে তেমনি পুলিশ যদি অপরিনামদর্শীতা ব্যতিরেখে মানুষের সাথে সুন্দর ও ভালো ব্যবহার করে থাকে মানুষকে তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য না ভেবে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করে থাকে তবে পুলিশের এখনও যতটুকু দুর্নাম ও বদনাম আছে তা হয়তো এক সময় বিদায় নেবে বলে অভিজ্ঞজনদের ধারণা। ০৬/৯/২০ ইং দৈনিক মুক্তখবর এ আইজিপির পরিকল্পনা ও পুলিশের সংস্কার নিয়ে যে সংবাদটি ছাপা হয়েছে তা পড়ে অনেকেই আশান্বিত। যাতে পুলিশের আচরণ ও অপরিনামদর্শীতার দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়, সুন্দর, মার্জনীয় এবং জনবান্ধন আইজিপি ড. বেনজীর আহমদের উদ্যোগ সফল হয় ইহাই জনপ্রত্যাশা। অনেকের অধঃস্তনদের মতো আইজিপি মহোদয়ের অধঃস্তনদের ব্যবহার যেন না হয়। আইজিপি মহোদয়ের ভাবমূর্তি উর্ধ্বে এবং তলানিতে নেয়ার জন্য অধঃস্তনরাই যথেষ্ট। পরিশেষে আবারও বলব, পুলিশ আমাদের গর্ব ও অহংকার। তবে পুলিশের কিছু লোকের অন্যায়, অপরিনামদর্শীতা, অসদাচারণ, গর্ব, অহংকার, অসদুপায়, মানুষের সাথে রূঢ় ব্যবহার যথেষ্ট সমালোচিত, এসবের উত্তরনেও জনগণের প্রত্যাশা কম নহে।