ঠাকুরগাঁওয়ে রাণীশংকৈলে সরকারি খুনিয়া দীঘি ভূমি দস্যুদের দখলে, সুশীল সমাজের ক্ষোভ

183

মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার ভান্ডরা মৌজায় খুনিয়া দীঘিতে ৭১ এর গণকবর হারিয়ে যাচ্ছে। সরকারি খুনিয়া দীঘিটি ভূমি দস্যুদের দখলে থাকায় মুক্তিযোদ্ধা সহ সুশীল সমাজ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এলাকার অসংখ্য নীরিহ বাঙ্গালীদের নির্মম, নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যা করে এ পুকুরে গণকবর দিয়েছিল পাক সেনারা।জানা গেছে, রাণীশংকৈল উপজেলার ভান্ডারা মৌজার জে,এল নং- ৮৯, খতিয়ান নং- ১, দাগ নং- ৩৭৭/১০৯১, জমির পরিমাণ ২.১৮ একর যা খুনিয়া দীঘি নামে পরিচিত। উক্ত জমি ভারত সম্রাট এর পক্ষে মালিকানা স্বত্বে জমিদারি পরগনা রাণীশংকৈল এর তৎকালীন জমিদার টংকনাথ চৌধুরী ওরফে টিএন চৌধুরী এর পুত্র কর্মনার্থ চৌধুরী মালিক ছিলেন। সিএস ৪৭৫নং খতিয়ানে আলোচ্য পুকুরটি রানীশংকৈল উপজেলার মেহের বক্স সরকার এর পুত্র কুসুম উদ্দীনকে মাছ ধরা স্বত্বে জলকর আদায় করার জন্যে তৎকালীন জমিদার তাকে অনুমতি দেয়। কিন্তু ঐ জমি অন্যত্রে বিক্রয় করা কিংবা হস্তান্তর করা নিষিদ্ধ মর্মে শর্ত আরোপ করা হয়। ফলে কুসুম উদ্দীনের নামে এসএ খতিয়ান হলেও জমির পরিমাণ উল্লেখ্য না থাকায় তিনি জমির প্রকৃত মালিক নয় মর্মে জানা যায়। উক্ত পুকুরটি এসএ ১নং খতিয়ানে পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের পক্ষে ডেপুটি কমিশনার দিনাজপুর এর নামে রেকর্ড ভুক্ত হয়। পরবর্তীতে কুসুম উদ্দীন দিনাজপুর ডিসি বরাবরে রেকর্ড সংশোধনের ও জমির পরিমাণ নির্ধারন করার জন্যে ১৯৮২ সালে আবেদন করেন। আইনে স্বত্বের মোকদ্দমা বা প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ৩৫ (২) ধারা অনুযায়ী রেকর্ড সংশোধনের ক্ষমতা জেলা প্রশাসক দিনাজপুর/অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কে কোন ক্ষমতা অর্পণ করা হয়নি। এটি দেওয়ানি আদালতে অথবা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে বিচার্জ বিষয় হওয়া স্বত্বেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ১৯৮২ সালে দিনাজপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাষ্ট্রের স্বার্থকে গুরুত্ব না দিয়ে ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কুসুম উদ্দীন এর নামে বে-আইনী ভাবে রেকর্ড সংশোধন করেন। বিভিন্ন সময়ে সরকারি জরিপে উক্ত প্রায় ৩ কোটি টাকার সম্পত্তি সরকারি খাস খতিয়ানে সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ড ভুক্ত হয়েছে। যাহার সকল কাগজ পত্র রাণীশংকৈল উপজেলার ভূমি অফিস ও ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংরক্ষণ রয়েছে। এ পুকুরটিতে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য স্মৃতি বিজরিত থাকলেও এলাকার কিছু ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিদের কারনে উক্ত সরকারি সম্পত্তি সরকারের হাত থেকে বে-দখল হয়ে স্মৃতি নষ্ট হয়েছে। জমি ও পুকুরটি বিক্রয় করা ও হস্তান্তর করা নিষিদ্ধ থাকলেও শর্ত ভঙ্গ করে ইতিপূর্বে কুসুম উদ্দীন ৯৬০১নং দলিল মুলে তার পুত্র হামিদুল এর কাছে উক্ত সম্পত্তি বিক্রয় করেছেন। হামিদুল উক্ত জমি গত ০১/০৯/২০১৬ ইং তারিখে রাণীশংকৈল উপজেলার সন্ধ্যারই গ্রামে আবুল কাশেমের স্ত্রী সুরাইয়া বেগমের নিকট বিক্রয় করিয়া হস্তান্তর করেন। বর্তমানে রাণীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় শীর্ষ নেতার যোগসাজোসে ভূমি দস্যু মোস্তফা আলম ঐ পুকুরে মাছ চাষ করছেন এবং ৭১ এর গণকবরকে কোন গুরুত্ব না দিয়েই তিনি উক্ত পুকুরে মাছ চাষ করে স্মৃতি নষ্ট করা সহ বছরে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা উপার্জন করে থাকেন। মোস্তফা আলম রাণীশংকৈল ভূমি অফিসের নকল নবিস হলেও দূর্নীতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার নামে বেনামে সম্পত্তির মালিক হওয়া, সরকারি পুকুর দখল করা এবং অসংখ্য দলিল জালিয়াতির ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে এলাকায় অভিযোগ রয়েছে। ঔএ ব্যাপারে রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ মৌসুমী আফরিদা জানান, উক্ত পুকুরের সমস্ত জমি খাস খতিয়ান ভুক্ত ও সরকারি সম্পদ। সম্প্রতি উক্ত পুকুরের যাবতীয় তথ্যাবলি লিখিত আকারে জেলা প্রশাসক ঠাকুরগাঁও মহোদয়ের দপ্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।এ ব্যাপারে ভূমি দস্যু মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন তথ্য দিবেন না বলে জানান। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার সচেতন মহল।