উস্কানি, অপবাদ ও অপপ্রচার শান্তি শৃংখলার অন্তরায়

205

এ.কে.এম শামছুল হক রেনু, লেখক কলামিষ্ট: অনেক সময় বাস্তবতার দিকদর্শন নিয়ে কিছু বললে বা লিখলে অনেক সময় এমনিতেই আলোচনা, অসমালোচনা ও পক্ষপাতিত্বের গ্লানি বহন করতে হয়। তারপরও অনেকেই সত্য, ন্যয় ও বাস্তবতার পক্ষেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখতে, বলতে দ্বিধা সংকোচবোধ করে না। যদিও অনেকেই কাহারও না কাহারও মন তোষ্ঠির জন্য ছাগলকে হাতী, খরগোশকে বাঘ ও সিংহ বানিয়ে বলে ও লিখে থাকে। যত আলোচনা, অসমালোচনা, অপবাদ ও পক্ষপাতিত্বের দোষ চাপানোই হোক না কেন, সত্য, বাস্তব ও ন্যায়ের পক্ষেই অনেকে বলতে ও লিখতে কুন্ঠাবোধ করেনি। সভ্য ও গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় উস্কানি, অপপ্রচার, অপবাদ যেমন কারও কাম্য নয়, তেমনি এসব কিছু শান্তি ও শৃংখলার অন্তরায়ও বটে। তদোপরি এসব কিছু শয়তানের প্রেতাত্মাদের মামুলি ব্যাপারও বলা চলে। উস্কানি, অপবাদ, অপ্রচার ও অপসংস্কৃতির কারণে সমাজে অনেক সময় যেমন বড় ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে তেমনি শান্তি, শৃংখলার ব্যাঘাতসহ অনৈক্য, অশান্তি, বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়ে থাকে। দেশে ও বিদেশে যত ঘটনা ঘটছে, তা ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনায়, হিংসা, বিদ্বেষ ও অপপ্রচারের কুহেলিকা। বাস্তবিকই এই প্রবিধান সকল কিছু অপকর্মের উৎস। অনেক সময় রাজনীতিই নয়, নিকট জনদের সাথে ফাটল সৃষ্টির জন্যও এই প্রবিধান টনিকের মতো কাজ করে থাকে। যা ক্যানসার, এইডস, এক সময়ের মহামারী কলেরা, বসন্ত, ম্যালেরিয়া ও বর্তমানে করোনা ভাইরাস কোভিড- ১৯ এর চেয়েও ভয়াবহ। যে কারণে অনেকেই উস্কানি দাতা, অপবাদ ও অপপ্রচারকারীদের সাথে সচরাচর মিশতে বা চলাফেরা করতে দ্বিধা সংকোচবোধ করে এবং ইবলিশ, শয়তানের চক্রান্ত ষড়যন্ত্র মনে করে থাকে। তদোপরি অনেকেই এসবকে এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করে। সে যত ক্ষমতাশালীই হোক না কেন। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ প্রফেসর ফিলিপ কে. হিট্টির (পিকে হিট্টি) লেখা ঐরংঃড়ৎু ড়ভ অৎধন ্ ঋড়ঁৎ ঈধষরঢ়য ড়ভ ওংষধস থেকে উদ্ধৃতি টেনে বলব, একবার হযরত ওমর (রাঃ) নিজের ছেলে আবু শামাকে মদ্যপানের মিথ্যা অভিযোগে বেত্রাঘাত করে মেরে ফেলেন। পরবর্তী সময় তিনি জানতে পারেন তাঁহার ছেলে কোনো অবস্থাতেই মদ্যপানের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। যা ছিল চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপবাদ। তা জেনে ছেলের কবরে গিয়ে তিনি শিশুর মতো ক্রন্দনরত অবস্থায় এই ভুলের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আমীনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন। এমন অসংখ্য ঘটনা, উপমা ও উদাহরণের যেন সীমা পরিসীমা নেই। আজ রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘাত, একজন আরেকজনের যেমন মুখ দেখতে চায়নি এমনকি চেহারা ও ছায়া দেখতে চায় না। এর পেছনে কুপমন্ডুকদের হরহামেশা তিলকে তাল, ছাগলকে হাতী ও খরগোশকে বাঘ ও সিংহ বানিয়ে স্বার্থ সিদ্ধির ভুল বুঝানো, কথা লাগনো ও ইন্ধনেরই অন্তরায়। তা না হলে যার কাছে যার যার রাজনীতি, এমন বৈরীতা হওয়ার তো কথা নয়। ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় অপরিনামদর্শী ও অন্যায়ভাবে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা হরণকারীদের সাথে ভারত বর্ষের স্বাধীনতাকামী ও আন্দোলনকারীরাও দখলদার ব্রিটিশ রাজন্য বর্গের সাথেও গোল টেবিল (জড়ঁহফ ঃধনষব পড়হভবৎবহপব) কনফারেন্সে বসেছেন। একনায়ক পাকিস্তান সরকারের সাথেও তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) নেতারাও গোল টেবিল

বৈঠকে বসেছেন। আজ দেশের বড় দুই দলের নেতাদের মধ্যে প্রতিদিন সভা সমাবেশ, প্রেসকনফারেন্সে যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও পাল্টাপাল্টি বিবৃতির যে তকমা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হতে দেখা যায়, তাতেও রয়েছে ভুল বুঝাবুঝি ও ইন্ধনের পরকাষ্টার সমাহার।

রাজনীতির কথা অকপটে বাদ দিলেও বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুকে উপলক্ষ করে বড় দুইদলসহ অন্যান্য দলের মধ্যেও তা দেখা যায়। যা বাস্তবিক দুঃখজনক ও হতাশা ব্যঞ্জক। এ প্রসঙ্গে ছোট একটি গল্প ও ব্যক্তিগত জীবনের একটি ঘটনা না বললেই নয়। দুই বাড়ীর মধ্যে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা মোকদ্দমা চলছিল। প্রায় সময়ই দুই বাড়ীর লোকজন ধামধারাক্কা মারামারির সংঘর্ষে লিপ্ত হতো। এক বাড়ীর লোকজন অপর বাড়ীর লোকদের বিবাহসাদী থেকে নিয়ে ঈদ পর্বেও দেখা সাক্ষাৎ হত না। একবাড়ীর লোকজন পার্শ্ববর্তী বাড়ীটির মসজিদে জুম্মার নামাজ ও ঈদের জামাতেও সামিল হতনা। দুই বাড়ীর এই রেষারেষি মামলা মোকদ্দমা ও বাদানুবাদের সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগী ঘটনাকে আরও বড় করার জন্য একরাতে এক পক্ষের সব্জীক্ষেত নষ্ট করে থাকে। পরের রাতে এই মধ্যস্বত্বভোগী ক্রীড়নক অপর পক্ষের কিছু ফলন আসা কলাবাগানও বিনষ্ট করে। এ কারণে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল বাদানোবাদ ও সংঘর্ষে নিপতিত হয়। আর ক্রীড়নক ও হোতা মুখে পান ও সিগারেট টান দিতে দিতে এ দৃশ্য আরামছে নিরাপদে বসে অবলোকন করতে থাকে। এক সময় দুপক্ষের মধ্যে সালিশে ভুল বুঝাবোঝির অবসান হলে জানা যায়, এত কিছুর জন্য দুই বাড়ীর কারও সম্পর্ক ছিল না। একটা দুষ্টচক্র ও মধ্যস্বত্বভোগী নীচক তামাশা দেখার জন্য দুপক্ষের মধ্যে লেজে গোবরে সম্পর্ক জিয়ে রেখে আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকত। এ সুযোগে তাদের মধ্যে আরেকটি পক্ষ বাদানুবাদ ও মামলা মোকদ্দমা জিয়ে রাখার সুযোগে উভয় পক্ষের জমিজমা কম দামে কেনার জন্য তাদের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র, ফন্দিফিকির ও ক্যামোপ্লেক্স কাজে লাগিয়ে স্বার্থক হয়েছে এবং দুই পক্ষকেই এক সময় পথে বসিয়ে ফতোর করে দিয়েছে। অপর দিকে নিজের থেকে একটি ঘটনা এ নিবন্ধে উপস্থাপন করছি। এক সময় নির্লোভ, সৎ, ন্যায়নিষ্ট, আদর্শ পরায়ন ও অন্যায়ের প্রতিবাদী একজন কর্মকর্তার সাথে আমার সুসম্পর্ক ছিল। তিনি খুবই ভালো মানুষ ও উদার মনের অধিকারী ছিলেন। প্রায় সময়ই আমার সাথে তার সাক্ষাৎ হত। প্রায় সময়ই একসাথে সকল সন্ধ্যায় হাঁটাহাটি করার অভ্যাস ছিল। অনেক সময় দেখা না হলে ফোনালাপ হত। একদিন তার কাছে ফোন করলে তিনি তা রিসিভ করেননি। পরের দিনের অবস্থাও তথৈবচ। ২ দিন পর তাঁর অফিসে উপস্থিত হই এবং ফোন রিসিভ না করার কারণ জানতে চাই। তিনি যথারীতি আমাকে চা পানে আপ্যায়িত করে বলেন, আমার অধস্তন আমাকে এমন কিছু কথা বলেছে, যা আমি সহ্য করতে না পারে যথারীতি ফোন রিসিভ করি নাই এবং রিপ্লাই দেইনি। আমার সামনে তাঁহার অফিসের অধস্তনকে ডেনে আনা হলে, সে বলে থাকে স্যার আমি যা বলেছি সবই মিথ্যা ও একেবারে বানানো ও সাজানো কথা। আমি আসলে আপনাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল ও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টির জন্যেই একজনের ইন্ধন ও পরামর্শে তা করেছি। দয়া করে আপনারা দুজনেই আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার মতো নি¤œ বেতনের অধস্তনদের পেটে লাথি দিবেন না। পরে জানা যায়, অফিসের অধস্তন লোকটি যার কুপরামর্শে দুইজনের নিবিড় সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরাতে চেয়েছিল, সে একজন ইন্ধনদাতা, কুপরামর্শকারী, অপবাদ উস্কানির মাস্টার, পরনিন্দুক, কুমন্ত্রনাকারী ও অপ্রচারকারী। একজনের সাথে আরেকজনের সুসম্পর্ক নষ্ট করাই তার নেশা ও পেশা। পরবর্তী সময় দুজনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলে বারবার একথাই মনে হয়, ইন্ধন, কান কথা, অপবাদ, অপ্রচার কতই না সমস্যা ও অন্ধকারে নিপতিত করে থাকে। যে ইন্ধন, উস্কানি, অপবাদ ও অপপ্রচারে সিক্ত ব্যক্তি, রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় পরিসরেও গ্যাংরিন হিসেবে কথিত। এসব থেকে ব্যক্তি, রাজনৈতিক পরিসর ও জাতীয় জীবনে যতই দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল ও শুভাশুভ। এ শ্রেণীটা দেশ, জাতি, জনগণ, রাজনৈতিক পরিষদ, শাসন, প্রশাসন, সমাজের নিকৃষ্টতম কীট, গ্যাংরিন ও শয়তানের প্রেতাত্মা। রাজনীতি ও সমাজে যা কিছু হচ্ছে সবকিছু ক্রীড়নকদেরই সৃষ্টি। তা না হলে এত কিছু হওয়ার নয়। আবার এ শ্রেণীটার কোনো জাত, ধর্ম, দর্শন নেই। স্বার্থের জন্য ওরা সবকিছুই করতে পারে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত মুখোশধারী ক্রীড়ানকরাই যাকে খুশি তাকে নাচাচ্ছে এবং দুঃসময়ে কেটে পড়তেও দ্বিধা সংকোচ বোধ করেনি। এই শয়তানের প্রেতাত্মারাই যত কিছুর সর্বনাশা ডেকে আনতে কুন্ঠাবোধ করে না। ওরা যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুক শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে চিহ্নিত করে এখনই ব্যবস্থা নেয়া মুখ্যম। অতীতে এই স্বার্থপর ক্রীড়নকদের কারণেই বঙ্গবন্ধু ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নির্মমভাবে নিহত হয়। যা কোনো অবস্থাতেই ভুলে যাওয়ার নহে। আজ দেশের অন্যান্য সমস্যার মধ্যে দুর্নীতি একটি মহাসমস্যা। এই দুর্নীতি সবকিছুকে রাহুগ্রাসের মতো গিলছে। এর পেছনেও রয়েছে স্বার্থপর ও ক্রীড়ানকদের পদচারনা। এসব থেকে জাতিকে মুক্তি ও আলোর পথ দেখাতে দরকার চোখ মুঝে ও কান বন্ধ করে ষাঁড়াশি অভিযান ও ডাস্টিক এ্যাকশন। এর অন্যথা হলে এক সময় বলার কিছু থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও এ শ্রেণীটার এখনও বোধোদয় হচ্ছে না, এমনকি দৃশ্যপটে দুর্নীতি, ধর্ষণ ও পৈশাচিকতা দাবালনের মতো এগিয়ে যাচ্ছে। ওরা আসলে দানব, রাক্ষস ও শয়তানের পদলেহনকারী। ০৬/১১/২০ ইং শুক্রবার দৈনিক যুগান্তর ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত আন্তঃবাহিনী জনসংযোগের (আইএসপিআর) একটি নাতিদীর্ঘ বিবৃতি দৃশ্যপটে আসে। বিবৃতিটির শিরোনাম ছিল “কয়েকজন অবাঞ্চিত সাবেক সদস্য সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।” যা যথেষ্ট ভাবনার ও স্পর্শকাতর বিষয়। যা দেখে যে কারও অবাক ও হতবাক না হওয়ার কথা নয়।

আইএসপিআরের এ বিবৃতিটি দেখেছি ও ভালোভাবে পড়েছি। তাতে হতবাক, বিষ্ময়, অবাক চিন্তা ও ভাবনার উপলব্ধি না থাকার কথা নয়।

দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি সুশৃংখল, সুসংগঠিত এবং দেশের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বদ্ধপরিকর। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আনীত লাল সবুজের পতাকা আমাদের গর্ব ও অহংকার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনগণ ও সর্বমহলের আস্থা ও বিশ্বাসের অনির্বান প্রতীক। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতীয় দুর্যোগ ও সমস্যায় সেনাবাহিনীর অবদানও চিরস্মরণীয়। তদোপরি দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নিজের জীবনকে হাসিমুখে উৎসর্গ ও ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যরা উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুত করে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দেশে এবং দেশের গন্ডি পেরিয়ে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা, গ্রহণযোগ্যতা, তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও পেশা দায়িত্বেরই বহিঃ প্রকাশ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধ গভীরভাবে পালন, ধারণ ও সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ মাতৃকার সেবায় সর্বদা নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। চলমান করোনা ভাইরাস ও কোভিড- ১৯ কে প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ হিসেবে ঘোষনা করার পর সেনাবাহিনী করোনা যুদ্ধে দেশব্যাপী ও জনগণের পাশে থেকে অভূতপূর্ব সেবা প্রদানও করে। ফলে দেশবাসীর অকুন্ঠ প্রশংসা অর্জন করেন। যা সেনাবাহিনীর কৃতিত্বকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। জানা যায়, সেনাবাহিনীতে দীর্ঘদিন চাকরি করার পর অবসর গ্রহন একটি স্বাভাবিক ও চলমান প্রক্রিয়া। অবসরপ্রাপ্ত প্রতিটি সেনাসদস্য অবসর জীবনে নিজেকে একজন সাবেক সেনাসদস্য হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে এবং সুশৃংখল জীবন যাপন করে থাকে। তবে অবসর জীবনে যদি কোনো সাবেক সেনা সদস্য শৃংখলা বিবর্জিত জীবন যাপন করে যা সামরিক ও বেসামরিক পরিমন্ডলে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করে। তখন তাকে সংশোধনের জন্য দেশের সব সেনানিবাসে অবাঞ্চিত বা চবৎংড়হধ ঘড়হ এৎধঃধ (চঘএ) ঘোষনা করা হয়। সম্প্রতি কয়েকজন অবাঞ্চিত ঘোষিত (চঘএ) অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য বিদেশ থেকে বিভিন্ন প্রকার মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া তথ্য সংবলিত এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে আইএসপিআরের প্রাপ্ত সূত্রে জানা যায় মান্যবর ব্যক্তিদের কথোপকথন সংগ্রহ করে আধুনিক প্রযুক্তির অপব্যবহার করে, তা কাটপেস্ট ও এডিট করে তাদের উদ্দেশ্যমাফিক বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থাপনের মাধ্যমে সেনা সদস্য ও দেশের সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়ে ক্রমাগত দেশ ও সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। আইএসপিআর বিবৃতিতে আরও বলে, তাদের এহেন কর্মকান্ড তাদেরকে চঘএ কারাটা যে যথার্থ ছিল তাই প্রমাণ করে। তাদের এই উদ্দেশ্য প্রনোদিত ঘৃন্য অপকর্মে প্রতিটি সেনা সদস্য অত্যন্ত মর্মাহত। কাল্পনিক, বাস্তবতা ও নৈতিকতা বিবর্জিত এবং উদ্দেশ্যে প্রনোদিত এসব গল্প বা বক্তব্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা এবং দেশের জনগণ বিশ্বাস করে না বরং ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে থাকে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী জাতির গর্ব ও অহংকার। মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন দুর্যোগ ও জাতির দুঃসময়ে ও দেশ পুর্নগঠনে সেনাবাহিনী যে অবদান রেখে চলেছে তা জাতীয় জীবনে অবিস্মরণীয়। তাদের অবদান ও ভূমিকাকে কোনো অবস্থাতেই ভুলে যাওয়ার নয়। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার, অপবাদ, উস্কানি, চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র বিকৃত মনমানসিকতারই বহিঃ প্রকাশ বলে কেহ মন্তব্য করলে তা অত্যুক্তি হওয়ার কথা নয়। দেশের সৌম্য, শান্তি, শৃংখলা, আনয়ন ও বহিশত্রুর হাত থেকে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা কল্পে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও জাতীয় উন্নয়নে অবদানই জনপ্রত্যাশা। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এদেশেরই গর্বিত সন্তান। তাদের অবদানকে কাহারও খাটো করে না দেখে পজিটিভ দৃষ্টিতে দেখা দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ ও নৈতিকতারই প্রতিফলন। অপপ্রচারমুক্ত সমৃদ্ধ সমাজ, সুন্দর দিকদর্শন ও সমৃদ্ধদেশ গঠনে উদ্ভাসিত গণতান্ত্রিক দৃষ্টি ভঙ্গিকে সামনে এগিয়ে নেয়াই হোক আমাদের পাথেয়। পরিশেষে বলব, অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অবঃ) সিনহাকে যারা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে এবং নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহমেদকে যারা অপমান অপদস্থ, মেরে ফেলার হুমকি ও মারধর করেছে এবং নৌবাহিনীর সেনাবাহিনীর লেফট্যানেন্ট/ক্যাপ্টেন বলে যে গালিগালাজ করেছে, তা খুবই দুঃখজনক। যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর ভাষা নেই। এর উপযুক্ত শাস্তিও জনপ্রত্যাশা। আর যারা অপপ্রচার, অপবাদ ও উস্কানি দিয়ে শান্তি শৃংখলায় অন্তরায় সৃষ্টি করে, ওরা দেশ, জাতি ও জনগণের ঘৃণিত পদলেহনকারী হিসেবে পরিগনিত।