দেশী প্রজাতির বৃক্ষরোপণে ফিরে পাচ্ছে শেরপুরের গারো পাহাড়ের প্রাণবৈচিত্র্য

682

মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, শেরপুর প্রতিনিধি: দেশী প্রজাতির বৃক্ষরোপণে আবারও প্রাণ ও জীববৈচিত্র্য ফিরে পাচ্ছে শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়নে সুফল প্রকল্পের নামে টেকসই বনায়ন জীবিকায়ন প্রকল্পের আওতায় শুরু হয়েছে দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি।
জনা যায়, এক সময় এ গারো পাহাড়ে দেখা যেতো বিভিন্ প্রজাতির পশু পাখির অভয়ারণ্য। শোনা যেতো পশু পাখির কোলাহল। কিন্তু নির্বিচারে বৃক্ষ লুটপাটের কারনে কালের আবর্তে উজাড় হয়ে গেছে বন। ফলে গারে পাহাড়ের এসব প্রাণি ও জীববৈচিত্র বিলুপ্তি হয়ে গেছে। এখন আর গারো পাহাড়ে চোখে পরে না পশু পাখির অভয়ারণ্য। শোনা যায় না মধুর সুরের পশু পাখির কোলাহল। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে যে পরিমাণে বন থাকার কথা সে পরিমাণে বন নেই গারো পাহাড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, গত ৯০ দশকেও গারো পাহাড়ে শালগজারিসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ছিল। ছিল নানান রঙ বেরঙের পশু পাখির অভয়ারণ্য। কিন্তু দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষ ধ্বংস করে গারো পাহাড়ে গড়ে তোলা হয় সামাজিক বনায়ন। বন অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিদেশী এ উডলট বাগানের গাছে বসতে দেখা যায় না কোন পশু পাখি। ফলে গারো পাহাড়ের পশু পাখির অভয়ারণ্য দিনে দিনে বিলুপ্তি হয়ে যায়। শুধু তাই নয় এসব উডলট বাগান প্রচুর পরিমানে পানি শোষণ করায় গারো পাহাড়ের ভূগভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। এতে গারো পাহাড়ে দেখা দিয়েছে প্রকৃতির বিরুপ প্রভাব। শীত মৌসুমে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি ও গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড তাপ মাত্রায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাণবৈচিত্র্য বিলুপ্তি হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরনের লক্ষে আ-লীগ সরকার গারো পাহাড়ে দেশী প্রজাতির বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নেয়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থে সুফল প্রকল্পের নামে টেকসই বনায়ন জীবিকায়ন প্রকল্পের আওতায় শুরু হয়েছে দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি।
জানা গেছে, ২০১৯/২০ অর্থ বছরে শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুড়ি, ঝিনাইগাতী উপজেলা রাংটিয়া ও নালিতাবাড়ি উপজেলার মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জ এলাকায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর বনের জমিতে রোপণ করা হয়েছে দেশীয় প্রজাতির গাছের চারা। দেশী প্রজাতির কাজু বাদাম, বহেড়া, চাপালিশ, কানাইডিঙ্গি, সোনালু, জাম্বুরা, তেলসুর, গামার, বাটনা, ঢাকী জাম, ক্ষুদিজাম, গাব, তেতুল, চিকরাশি, জলপাই, লাল চন্দন, নিম, জামরুল, ডেওয়া, অর্জুন, নাগেশ্বর, গর্জন সহ বিভিন্ন ৫০ প্রজাতির চারা প্রতি হেক্টর জমিতে রোপণ করা হয়, ২ হাজার ৫শ করে চারা। ইতিমধ্যেই চারাগুলো বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। ফিরে আসতে শুরু হয়েছে গারো পাহাড়ের আদিচিত্র। এ ব্যাপারে শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক ড. প্রাণতোষ রায় বলেন, সুফল টেকসই বনায়ন জীবিকায়ন বৃক্ষরোপণের উদ্দেশ্য হচ্ছে বনের বৃক্ষ আর নিধন হবে না। বৃক্ষের ফলগুলো এলাকাবাসী ও বনের পশু পাখির খাদ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এতে গারো পাহাড়ে আবার ও জীববৈচিত্র্যের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। ফিরে আসবে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য। তিনি আরও বলেন, গাছ বড় হবার পর তা নিলামে বিক্রি করা হবে। কিন্তু কোন গাছ কাটা হবে না। ধন্য দেশগুলো জলবায়ু তহবিলের অর্থে তা নিলামে ক্রয় করবে। মেয়াদোত্তীর্ণ হবার পর আবারও নিলামে বিক্রি করা হবে। এভাবে এসব বৃক্ষ থেকে প্রতিবছর রাজস্ব ক্ষাতে বিপুল পরিমাণের অর্থ।