করোনা মহাবিপদ সংকেত, ব্যর্থ প্রয়াস ও বুলন্দ আওয়াজ

170

এ.কে.এম শামছুল হক রেনু, লেখক কলামিষ্ট : আজ প্রায় ১৫ মাস ধরে করোনা কোভিড- ১৯, বাংলাদেশে তান্ডব সৃষ্টি করে চলছে। এর সাথে বর্তমানে সংযুক্ত হযেছে ভারতে সৃষ্ট আরও ভয়াবহ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার। ৯ জুন গণমাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সব মিরিয়ে এ পর্যন্ত দেশে মোট সনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ১৫ হাজার ২৮২ জন। আর করোনা ভাইরাসে সর্বমোট এ পর্যন্ত দেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৯১৩ জন। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬০ লাখ ৮৬ হাজার ২০৭টি। এছাড়া ৯ জুন গণমাধ্যমে প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ফরিদপুর জেলায় করোনার সংক্রমন হার ২৯.৫৮, গোপালগঞ্জ ১৮.৬০, রাজবাড়ী ২০.৬৫, খাগড়াছড়ি ১০০ শতাংশ (যদিও এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশের পর পরবর্তী সময় আপত্তি জানানো হয়ে থাকে) ঠাকুরগাঁও ২৫, দিনাজপুর ৩৩.৩৩, রংপুর ৪৭.৫৩, ঝিনাইদহ ২৫.৪৫, সুনামগঞ্জ ২৮.৫৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৯.২১, খুলনা ৩১.৫২, সাতক্ষীরা ৫৫.০৮, পিরোজপুর ৬৬.৬৭, ঝালকাঠি ৩১.২৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা সংক্রমনের হার নিয়ে আশংকা ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, এভাবে সংক্রমন বাড়লে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। এমনিভাবে দেশের ৩২ জেলায় জ্যামিতিক হারে করোনা সংক্রমন বেড়ে চলেছে বলে জানা যায়। বিশেষজ্ঞদের অভিমত ঢাকায় যদি করোনার এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমন শুরু হয় তাহলে কোনোভাবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে না। তাই জরুরী ভিত্তিতে সীমান্ত এলাকা এবং যেসব জেলা উপজেলায় ডেল্টার সংক্রমনশীলতা লক্ষণীয় সেসব এলাকায় কারফিউ জারি করার পরামর্শ দিয়েছেন শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সায়েদুর রহমান। তিনি আরও বলেছেন, সরকার ঘোষিত ঢিলেঢালা বিধি নিষেধ দিয়ে সর্বোচ্চ সংক্রমনশীল ও করোনার মহাবিপদ সংকেত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এছাড়াও অনেকেই সরকারের এই চেষ্টাকে ব্যর্থ প্রয়াস ও বুলন্দ আওয়াজ হিসেবে মনে করে থাকে। তাই সারাদেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি ছড়িয়ে পড়ার আগেই বর্তমানে কারফিউ জারি করে সংক্রমনশীল এলাকাগুলো সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। সেখানে পরীক্ষার হার বাড়িয়ে দিতে হবে এবং দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করে ওই এলাকার সবাইকে টিকার আওতায় আনতে হবে। অপরদিকে ব্রিটিশ গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবীর যেকোন ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমনশীলতা অনেক বেশী। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে গণ টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে। ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের ৩ কোটি টিকা কেনার চুক্তি হয়।

এমনকি টিকার মূল্য অগ্রিম পরিশোধও করা হয়। চুক্তি অনুসারে প্রতিমাসে ৫০ লাখ করে টিকা দেয়ার কথা। কিন্তু দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ দেয়ার পর চুক্তি অনুযায়ী টিকা দেয়া থেকে বিরত থাকে সেরাম ইন্সটিটিউট। ফলে টিকাদান কর্মসূচীর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। প্রথম ডোজ দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সরকার চীন ও রাশিয়ার টিকা কেনার উদ্যোগ নেয়। তবে যারা প্রথম ডোজ অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছে তাদের দ্বিতীয় ডোজে এই টিকারই প্রয়োজন।

১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না বলে জানা যায়। অধিকাংশ কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এ টিকার জন্য বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করা হলেও এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। দেশে এখন মাত্র ২২টি কেন্দ্রে দেয়া হচ্ছে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড। ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে আনা এ টিকা গত মার্চের শেষ দিকে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। যে কারণে বাংলাদেশে তৈরী হয় টিকার সংকট। রাজধানীর ৪৭টি কেন্দ্রের ২৫টিতে এখন টিকা দেয়া বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কোন কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে এবং কোন কেন্দ্রে দেয়া হচ্ছে না তা সাধারণ মানুষ জানে না। এছাড়া ৩৯ জেলায় টিকা ফুরিয়ে গেছে। এসব জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে টিকা ফুরিয়ে যাওয়ার কথাও অনেকেই জানে না। দেশের এ পর্যন্ত ৪৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৪২ লাখ ২৮ হাজার ৭৪১ জন। প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মতো টিকা নেই। মূলত যারা ১৪ মার্চের পর প্রথম ডোজের টিকা দিয়েছিল তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে এ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রথম ডোজের গণ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হয় আরও ৮ সপ্তাহ পর ৮ এপ্রিল। টিকার সংকট দেখা দেয়ায় ২৭ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া বন্ধ রাখা হয়। সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের হাতে মোট ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা ছিল। ইতোমধ্যে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন। তাদের সবার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিশ্চিত করতে মোট ১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৩০ ডোজ টিকা প্রয়োজন। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী টিকার মিক্সড ডোজ নিয়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে বিস্তর গভেষণাও চলছে। অর্থাৎ প্রথম ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজে অন্য কোনো কোম্পানীর টিকা দেয়া যাবে কি না ? অর্থাৎ দুই ডোজের দুই ধরণের টিকা দেয়া যাবে কি না ? যদিও এ নিয়ে ভারত টিকা বন্ধ করে দেয়ার পর চরম সমস্যা ও অসুবিধা বিরাজ করছে। ভারত করোনার চুক্তিবদ্ধ টিকা দিতে যে কাজটি করেছে তা বাংলাদেশের জন্য একটি মহাবিপদ সংকেত হিসেবে বিবেচিত ও পরিগণিত। যা কারও কাম্য ছিল না। এমনিভাবে ভারত চুক্তিমতো হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ সংকট সৃষ্টি হয় এবং পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে ৪/৫ গুণ বেড়ে যায়। সূত্রে জানা যায়, ০৮/৬/২১ ইং মঙ্গলবার দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও নির্বাহী ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়েরের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটিতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গভেষণা ও পলিসি বিভাগের রিসার্চ ফেলো জুলকার নাইন। তাতে বলা হয় করোনা নিয়ন্ত্রন কার্যক্রমে পদে পদে সুশাসন ঘাটতি ছিল। রোগ সনাক্তকরণ, চিকিৎসা, লকডাউন, টিকা ক্রয় এবং বিতরণে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় ছিল না। একটিসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাপে টিকা ক্রয়ে বিকল্প উৎসের সন্ধ্যান করা হয়নি। জাতীয় কমিটি, একটি চীনা প্রতিষ্ঠানের টিকা ট্রায়েলের অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সাড়া না দেয়ায় ট্রায়াল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া দেশীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত টিকা ট্রায়েলের অনুমোদনেও দীর্ঘ সূত্রতা লক্ষ্য করা যায়। টিকা ক্রয়ে বাংলাদেশ সরকার বেক্সিমকো এবং ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যে চুক্তিতে স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল। সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সংকটে মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়েছে। এতে একজন করোনা রোগীর গড় খরচ হয়েছে ৫ লাখ টাকা। এসব কাজে সামগ্রিকভাবে করোনা নিযন্ত্রণ কার্যক্রম পিছিয়ে পড়েছে। সংস্থাটি বলছে, দুর্নীতিবাজদের শাস্তি না দিয়ে তথ্য নিয়ন্ত্রণে তৎপর ছিল সরকার। এ সময় করোনা নিয়ন্ত্রনে আগামী দিনের জন্য ১৯টি সুপারিশ করে টিআইবি। সম্মেলনে জানানো হয় সংক্রমনের ১ বছর ৩ মাস পার হয়েছে কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী আইসিইউ ভেন্টিলেটর ইত্যাদি চিকিৎসা সুবিধার সম্প্রসারণ করা হয়নি। বাজেট এবং যন্ত্রপাতি থাকা স্বত্বেও সব জেলায় ১০টি করে আইসিইউ শয্যা প্রস্তুতের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হয়নি। অনেক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে ফেলে রাখা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ সংকটে সাধারণ মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়েছে। ফলে একজন করোনা রোগীর গড় খরচ হচ্ছে ৫ লাখ টাকা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩.৮ কোটি মানুষকে (জনসংখ্যা ৮০ শতাংশ) টিকার আওতায় নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু সে অনুযায়ী টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে। টিকা সংগ্রহে দূরদর্শিতার ঘাটতিতে নির্ধারিত সময়ে ১৩ লাখের বেশী টিকা দ্বিতীয় ডোজে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আবার অনলাইন ভিত্তিক নিবন্ধন হওয়ার ফলে ৭৪.৪ শতাংশ টিকা গ্রহীতাকে অন্যের সহায়তায় নিবন্ধন নিতে হয়েছে। এছাড়া নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ৪২.৬ শতাংশ টিকা গ্রহীতা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। এদের প্রায় ৭৮ শতাংশকে নিবন্ধন করতে ৫ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়েছে। গভেষণায় আরও দেখা গেছে যথাযথভাবে এলাকাভিত্তিক টিকার চাহিদা যাচাই না করায় সরবরাহ না থাকায় কোনো এলাকায় আকষ্মিক সংকট এবং কোনো এলাকায় টিকা উদ্ধৃত থাকা ও ফেরত দেয়া হয়েছে। আবার চাহিদা যাচাইয়ের মাধ্যমে বিদেশগামীদের যথাসময়ে টিকার আওতায় আনা হয়নি। টিকা সনদ না থাকায় প্রত্যেকের গড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়েছে। টিকাদান কেন্দ্রেও নানা অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে। নির্ধারিত কেন্দ্রে টিকা নিতে গিয়ে জরিপে অন্তর্ভূক্ত ২৭.২ শতাংশ টিকা গ্রহীতা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। ৫০.২ শতাংশ টিকা গ্রহীতাকে উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণও রেকর্ড করা হয়নি। টিকা কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়নি। ৫৭.৬ শতাংশ টিকা কেন্দ্রে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা নেই। টিকা গ্রহীতার ৬৫.৮ শতাংশ কোনো অভিযোগ করতে পারেনি। ২২.১ শতাংশ কীভাবে অভিযোগ করতে হয় জানে না। বাংলাদেশ সরকার বেক্সিমকো এবং সেরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যেকার টিকা ক্রয় চুক্তি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল প্রকট। টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয় বিধি অনুসরণ করা হয়নি। যৌক্তিক কারণ না দেখিয়ে টিকা আমদানীতে তৃতীয় পক্ষকে অন্তর্ভূক্ত করায় ইউরোপিয় ইউনিয়নভূক্ত দেশ ২.১৯ ডলার, ভারত ২.৮ ডলার, আফ্রিকান ইউনিয়ন ৩ ডলার ও নেপালের ৪ ডলারের চেয়ে বেশী মূল্যে কোভিশিল্ড টিকা ৫ ডলার করা হয়েছে। সরকার সেরাম ইন্সটিটিউটের কাছ থেকে সরাসরি টিকা আনলে প্রতি ডোজে যে টাকা বাঁচত তা দিয়ে ৬৮ লাখ বেশী টিকা ক্রয় করা যেত। ক্রয়বিধি ২০০৮ এর ৩৮ (৪) গ অনুসরণ না করে ত্রিপক্ষিয় চুক্তিতে অন্তর্ভূক্ত প্রতিনিধিদের মধ্যে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাও রয়েছে। যা আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ অনুচ্ছেদ ১২ কে অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে এমন কেউ সংসদ সদস্য পদে থাকতে পারবেন না। গভেষণায় আরও দেখা গেছে হাসপাতালের ব্যয়ে দুর্নীতি অব্যাহত ছিল। যেমন পাঁচটি হাসপাতালে ক্রয়, শ্রমিক নিয়োগ ও কোয়ারেন্টিন বাবদ ৬২.৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ কোটি টাকার দুর্নীতি, ক্রয়বিধি লংঘন করে ১ লাখ কিট ক্রয়, বিধি লংঘন করে অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে ক্রয়াদেশ। কারিগরি জনবলের ঘাটতি মেটাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগে জনপ্রতি ১৫-২০ লাখ টাকা ঘুষের অভিযোগ উঠেছে। পরিশেষে টিআইবির উপসংহারে বলা হয় (ক) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাপে টিকার বিকল্প উৎসের সন্ধ্যান করা হয়নি। (খ) আইসিইউ সংকটে করোনা রোগীর জনপ্রতি খরচ ৫ লাখ টাকা। (গ) দুর্নীতিবাজদের শাস্তির পরিবর্তে তথ্য নিয়ন্ত্রণে তৎপর সরকার। দিনের পর দিন দেশে করোনা বৃদ্ধিসহ ভারতের নবসংক্রমিত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে যুক্ত হয়ে করোনা যেভাবে সামনে এগিয়ে চলছে যদি এখনই ইহাকে প্রবলভাবে বাধা না দেয়া হয় তবে করোনা কোন দিকে ধাবিত হয় তা নিয়ে আশংকা ব্যক্ত করেছে দেশের বিশেষজ্ঞরা। যত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয় ততই মঙ্গল। তা না হলে করোনা কোভিড- ১৯ ও নব সংক্রমিত ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট কোনদিকে ধাবিত হয় তা নিয়ে সঠিকভাবে কেহই কিছু বলতে পারছে না। এরই মধ্যে সংক্রমিত হচ্ছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। এই সংক্রমন দেশের ১০ নং বিপদ সংকেত মনে করে প্রয়োজনে সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিত বলে অনেক রাজনীতিকরা মনে করে থাকে। করোনা যদি এমনিভাবে ঘূর্ণিঝড়, সুনামী ও দাবানলের মতো অপ্রতিরোধ গতিতে বাধাহীনভাবে এগিয়ে চলে তবে দুঃখ, বেদনা ও যাতনার শেষ না থাকারই কথা। বর্তমানে দেশের ১ নং সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে করোনার মহাছোবল ও ১০ নং মহাবিপদ সংকেত থেকে দেশকে রক্ষা করাই হোক পাথেয়। আগে নিজের ও দেশের মানুষের জীবন রক্ষা, তারপর রাজনীতি ও অন্যান্য কাজকর্ম পরিচালনা। তদোপরি করোনা নিয়ে রাজনীতি দুর্নীতি বুলন্দ আওয়াজ কারও কাম্য নহে।