ভেষজ উদ্ভিদ দূর্বা

421

লেখা ও ছবি- নূর আলম গন্ধী : গ্রামাঞ্চলের মানুষজনের কাছে দূর্বা খুবই পরিচিত ও উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ। দূর্বাকে সাধারণত সবাই দূর্বাঘাস হিসেবেই চিনেন। অঞ্চলভেদে স্থানীয় মানুষজনের কাছে দূর্বা, দুবলা, দুব্বেঘাস ইত্যাদি নামে পরিচিত। আমাদের দেশের প্রায় সর্বত্রই দূর্বা জন্মে ও চোখে পড়ে। অনাদর অযত্ন আর অবহেলার মাঝে বাংলার প্রকৃতি পরিবেশে টিকে আছে বহুকাল ধরে। বাসা-বাড়ির আঙ্গিনা, রাস্তার ধার, পুকুর পাড়, রেল লাইন, খেলার মাঠ, ফসলি জমি ও ফসলি জমির আল, পতিত জমি কোথায় নেই দূর্বা? দূর্বা যেন অনায়াসে নিজেকে উপস্থাপন করে।
দূর্বা বহুবর্ষজীবি ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। গাছ খুবই কষ্টসহনশীল, অনাবৃষ্টি-খরা ও প্রতিকূল পরিবেশের মাঝেও নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে এবং বংশ টিকিয়ে রাখতে সক্ষম। এর ইংরেজি নাম Bermuda grass,পরিবার,Gramineae, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Cynodon dactylon। দূর্বার কা- মাটি স্পর্শ করে চলে এবং কা-ের পর্বসন্ধি থেকে শেকড় জন্মে মাটিকে আকড়ে ধরে। কা- বহু শাখায়িত, কা-ের পর্ব স্পষ্ট। পাতা লম্বা ও সরু, অগ্রভাগ সূচালো, রঙে হালকা সবুজ থেকে গাঢ় সবুজ। ফুল সূক্ষ, রঙে সাদা। ফুল শেষে ফল হয়। ফলে বীজ ধরে, বীজ আকারে অতি ক্ষুদ্র, রঙে সবুজ। এপ্রিল থেকে জুলাই-আগস্ট মাস ফুল ফোটা, ফল ও বীজ পরিপক্কতার সময়।
দূর্বার রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার ও ভেষজগুণ- ধর্মীয় আচার রীতি ও সংস্কৃতিতে দূর্বা ব্যবহার হয়ে আসছে বহুকাল আগে থেকে। ভারতীয় সংস্কৃতি ও পুরাণে দূর্বা হচ্ছে দীর্ঘায়ু ও কল্যাণের প্রতীক। তাছাড়া প্রাচীন আর্য সমাজে ধান হচ্ছে ধন বা ঐশ^র্যের প্রতীক। আর তাই সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন পূজাপার্বণে দূর্বা ব্যবহারের পাশাপাশি তাঁরা বিয়ে, অন্নপ্রাশন ও অন্যান্য শুভ কাজে ধান-দূর্বা মাথায় স্পর্শ করিয়ে ঐশ^র্য ও দীর্ঘায়ু লাভের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
গ্রামাঞ্চলে গবাদি পশুর জন্য দূর্বা প্রধান ও পুষ্টিকর খাদ্য। গোখাদ্য হিসেবে এর যতœ ও চাষাবাদ চোখে পড়ে। তাছাড়া বাসা-বাড়ির সামনে, খেলার মাঠে বা বাগানের সবুজ আস্তরণের জন্যও দূর্বা চাষ করা হয়। মাটির ক্ষয় রোধে দূর্বার ভূমিকা রয়েছে আর তাই নতুন মাটি উত্তোলিত স্থানে দূর্বা রোপণ করা হয়।
আয়ুর্বেদীয় মতে দূর্বা মহৌষধ। স্বাধে কষা-মিষ্টি। দূর্বার কা-, পাতা সব অংশ ব্যবহার উপযোগী। এতে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, জৈব অ্যাসিড, এনজাইম, ফাইবার, সোডিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। দূর্বা যে সকল রোগের কাজ করে- আঘাতজনীত বা কেটে যাওয়া স্থানের রক্তক্ষরণ বন্ধে, এ ক্ষেত্রে দূর্বা পিষে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিতে হয়। গ্রামাঞ্চলে বহুকাল আগে থেকে এর ব্যবহার রয়েছে। তাছাড়া চর্ম রোগে, যৌন রোগে, অশ^ রোগে, অনিদ্রায়, ব্রুণে, অরুচি, পিত্ত ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে, শে^ত প্রদর রোগে, রক্ত পিত্তে, চুল পড়া বন্ধে, দন্ত রোগে, বাত ব্যথা নিরাময় ও আমাশয় রোগের কাজ করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।