দুই শতাধিক পরিবার পানি বন্ধি : দাকোপে ভাঙনে বেড়িবাঁধসহ ১২টি বাড়ি পশুর নদী গর্ভে বিলীন

66

দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি: মখুলনার দাকোপে প্রবল ভাটার টানে ২০০ মিটার ওয়াপদা বেড়িবাঁধসহ ১৫টি বসতঘর পশুর নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। ভাঙন সংলগ্ন এলাকা থেকে আরো একাধিক পরিবার তাদের বসত বাড়ির মালামাল রক্ষার্থে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। কৃষকের আধা পাকা আমন ধানের ক্ষেত পানিতে ঢুবে থাকায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। ভেসে গেছে দুইটি গ্রামের প্রায় অর্ধশত পুকুরের সাদা মাছ।
সরেজমিনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, উপজেলা সদর পানখালী ইউনিয়নের পানখালী খলিসা স্লুইচ গেট সংলগ্ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১ নম্বর পোল্ডারের ওয়াপদা বেড়িবাঁধে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ ভাঙন ও ফাঁটল দেখা দেয়। এলাকাবাসীর মধ্যে তখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে বুধবার গভীর রাতে প্রায় ২০০ মিটার বাঁধ পশুর নদী গর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়। এ সময় মানুষের কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বাঁধের পাশেই ১২টি বসত বাড়ি ও নানা স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থরা হলেন বাক প্রতিবন্ধি তাপস রায়, পরিমল রায়, অনুরূদ্ধ রায়, মহাদেব কুমার রায় (ছোট), কিংকর রায়, শংকর রায়, মহাদেব রায়, অমল কৃষ্ণ রায়, মলয় রায়, প্রণয় কুমার রায়, জ্যোতিশংকর রায়, প্রভাত রায়। ভাঙন এলাকা থেকে অনেক পরিবার তাদের বসত বাড়ির মালামাল রক্ষার্থে তা ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। পশুর নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় বড় খলিশা ও পানখালী গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক বসত বাড়ি প্লাবিত হয়ে প্রায় সহ¯্রাধিক মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া প্রায় এক হাজার বিঘা আধা পাকা আমন ফসলের ক্ষেতে পানি ঢুকে পড়ায় এলাকার শতশত কৃষক পরিবার সম্পূর্ণ ভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন।
এদিকে বুধবার দুপুরে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস এমপি। তিনি এ সময় পাউবোর কর্তৃপক্ষকে নদী ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ নেওয়ার নির্দ্দেশ দেন। এসময়ে তিনি নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারের পক্ষ থেকে সহয়তা দেয়ার আশ্বস দেন। এসময়ে তার সাথে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ানম্যান শেখ আবুল হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিন্টু বিশ্বাস, পানখালী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ সাব্বির আহম্মেদ,সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল কাদের, ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মন্ডল, ইউপি সদস্য শেখ শহিদুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য জ্যোতিশংকর রায়, পাউবো’র প্রধান প্রকৌশলী মোঃ তাহমিদুল ইসলামের নেতৃত্বে পাউবোর তত্ববধায়ক প্রকৌশলী মোঃ শফি উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম, উপ-বিভাগীয় প্র্রকৌশলী সুজয় কর্মকার। ভাঙন কবলিত স্থানে সহকারী প্রকৌশলী গোপাল চন্দ্র দত্তের নেতৃত্ব শ্রমিকরা বাঁধ আটকানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান জানান, আর কয়েকদিন পর আমন ধান কর্তন শুরু হবে। এখন কৃষকের আধা পাকা ধানক্ষেত পানিতে ঢুবে থাকলে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কারণ পানি নেমে যাওয়ার সময় ওই ধান গাছগুলি নুয়ে পড়ার সম্ভবনা বেশি।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিন্টু বিশ^াস বলেন, পানখালী খলিস স্লুইচ গেট সংলগ্ন এলাকায় ভয়াবহ নদী ভাঙনের বিষয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করেছি। এছাড়া ভাঙন কবলিত স্থানে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য পাউবো’র উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।