করোনাকালীন ঈদ উৎসবও হউক সম্প্রীতির বন্ধনে সমৃদ্ধ

395

প্রদীপ কুমার দেবনাথ: ‘ঈদ’ মানে খুশি আর ‘ফিতর’ শব্দটি ‘ফিতরা’ শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ দানখয়রাত। তাহলে, ‘ঈদুল ফিতর’ এর অর্থটি দাঁড়ালো দানখয়রাতের মাধ্যমে সকলে মিলে খুশীর ঈদ উদযাপন। ঈদের সামাজিক অর্থ উৎসব। সুপ্রাচীন কাল হতে বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা ধনী-দরিদ্র নির্ব্বিশেষে সকলে মিলে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে উদযাপন করে থাকেন বিশেষ এ দিনটি। মুসলমানদের প্রধান দুটি উৎসব ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আজহা – দুটোরই আলাদা গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। ঈদ – উল – ফিতরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো দীর্ঘ ১ মাস সিয়াম সাধনা অর্থাৎ রোযা রাখার পর পবিত্র এ ধর্মীয় আচারটি উদযাপন করা হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য অত্যধিক পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ। তারা পুরো রমযান মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, সেহরী আর ইফতারের মাধ্যমে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী চলে। সংযম আর ধর্মীয় অনুশাসন মতো চলার পরে পবিত্র ঈদ -উল – ফিতরের দিনটিকে অত্যন্ত আনন্দের একটি উৎসব হিসেবে তারা উদযাপন করে। সাধারণত ঈদুল ফিতরের দিনে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নতুন নতুন পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, পায়জামা, টুপি পড়ে ঈদ গাহে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায়, কোলাকুলি করা, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে একে অপরকে আলিঙ্গন করা, গরীব-দুঃখীদের দান করা, নতুন কাপড়, খাবার বিতরণ একটি সাধারণ দৃশ্য। মাহিলারা নতুন শাড়ি পড়ে, মেয়েরা বাহারি পোশাক, মেহেদীর সাজে নিজেদের সাজানো, বাহারি চুড়ি, ফিতাসহ বিভিন্ন সাজসজ্জায় সজ্জিত হয়ে এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরাফেরা করা, হাসি-তামাশায় দিনটি কাটানো বাংলাদেশীদের সহজাত ঈদ উৎসব। পবিত্র ঈদে খাবারের ও বৈচিত্র্য লক্ষ্যণীয়। সেমাই একটি কমন খাবার আইটেম। তাছাড়া বিভিন্ন পিঠাপুলি, পোলাও মাংস, বিরানি সহ বিভিন্ন উপাদেয় খাদ্য তৈরি করে পরিবারের সদস্যবৃন্দ, আত্মীয়স্বজন, মেহমানদের আপ্যায়ণ করা হয়। ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতে সবাইকে নিয়ে ঘুরাফেরা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, পরিবার ও আত্মীয়স্বজন এমনকি দরিদ্রদের সাহায্য সহযোগিতা আরেকটি সাধারণ দৃশ্য। বাস্তবিক পক্ষে এক বিশাল আনন্দের উৎসব ঈদ। যদিও ঈদের দিনে প্রচুর কাজ তবুও সকলকে একত্রে নিয়ে, একসাথে পেয়ে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম ঈদ। কিন্তু, বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সারাবিশ্বে ব্যাপক আকার ধারণ করায় এবার ঈদের চিরাচরিত উৎসব ব্যাহত হবে। নিয়ম-নীতির মধ্যে থেকে যতটুকু সম্ভব সবচেয়ে বড় এ উৎসবটি পালন করতে হবে। নিকট আত্মীয়ের অনেককেই পাওয়া যাবেনা উৎসবে। অমেক করোনা যোদ্ধারা তাদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে ঈদ করতে পারবেননা। আবার সবসময় ঈদ উৎসব বঞ্চিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, জেলা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন কর্মকর্তাবৃন্দ, ডাক্তার, নার্স সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রেই যতদুর সম্ভব খুশির ঈদে শরীক হবেন। দূরে আর কাছে, সকলে বা একাকীত্বে যেখানেই ঈদ হউক – অন্তরে থাকুক সম্প্রীতির বন্ধন। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, দেশের মানুষ নিরাপদে থাকুক, সুস্থ থাকুক – এটাই এবার ঈদে সকলের কামনা।